২৩ জনের প্রাণহানি; রোয়ানুর আঘাতে লণ্ডভণ্ড উপকূল
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৫৫:৪৯,অপরাহ্ন ২১ মে ২০১৬ | সংবাদটি ৮৪২ বার পঠিত
আবহাওয়া অফিস শনিবার সন্ধ্যার দিকে চট্টগাম, মংলা, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে সাত নম্বর বিপদসংকেত নামিয়ে তিন নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে।
এর আগে আজ শনিবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দুর্বল হয়ে উপকূলীয় এলাকা অতিক্রম করে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের একটানা গতিবেগ ছিল ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। এতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক এলাকা।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তার পর অনেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে গেলেও বেশির ভাগ মানুষ নিজের বসতবাড়ি রেখে অন্যত্র যায়নি। এতে মানুষ ছাড়াও গবাদি পশুর প্রাণহানি হয়েছে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের।
গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করে। উপকূলীয় অঞ্চল থেকে লোকজনকে সরিয়ে যেতে বলে।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে গতকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আজ শনিবার সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বর্ষণ হয়। তবে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে উপকূল অতিক্রম করায় কমে গেছে বাতাসের বেগ। রাজধানীতে বিকাল চারটা থেকে আর ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে না।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু আজ দুপুর ১২টায় উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে চট্টগ্রামের কাছ দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম শুরু করে এবং পরবর্তী চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট অধিক উচ্চতা জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়ার পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ এবং বিআইডব্লিউটিসি জানায়, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চ ও স্টিমার সার্ভিস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে এবং এগুলোকে নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে প্রবল বৃষ্টির কারণে উপজেলার জঙ্গল ছলিমপুর পাহাড়ি এলাকায় পাহাড় ধসে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন জঙ্গল ছলিমপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী কাজল বেগম (৫০) ও তার ছেলে বেলাল হোসেন (১২)।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম ভূইয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে শুক্রবার রাতে প্রবল বৃষ্টি হয়। এরপর শনিবার সকালে পাহাড় ধসে পড়লে রফিকুল ইসলামের ঘর মাটি চাপা পড়ে। এতে তার স্ত্রী ও ছেলের মৃত্যু হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম নগরীতে শনিবার দুপুরে আম কুড়াতে গিয়ে নগরীর পাঁচলাইশে মো. রাকিব (১১) নামে এক শিশু নিহত হয়েছে।
ভোলা
ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় গাছ ভেঙে ও ঘর ধসে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন— উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের শশিগঞ্জ গ্রামের নয়নের স্ত্রী রেখা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. মফিজের ছেলে আকরাম (১৪)।
বাংলদেশ রেড ক্রিসেন্টের সাইক্লোন প্রিপার্ডনেস প্রোগ্রামের উপ-পরিচালক মো. শাহাবুদ্দবীন সাংবাদিকদের জানান, শুক্রবার শেষরাতের দিকে ভোলায় প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। ভোর ৪টার দিকে ঝড়ের তীব্রতা বেড়ে গেলে ঘর চাপা পড়ে আকরাম আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৬টায় সে মারা যান। এছাড়া ঝড়ে গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়লে চাপা পড়ে মারা যান রেখা বেগম। অপরদিকে দৌলতখান উপজেলার দক্ষিণ জয়নগর গ্রামের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী রেনু বিবি ঘরচাপায় মারা যান।
পটুয়াখালী
প্রবল ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে শনিবার সকালে ঘর ভেঙে পড়লে পটুয়াখালী দশমিনা উপজেলায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দশমিনার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজহারুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’র প্রভাবে প্রবল ঝড়ো বাতাসে শনিবার সকালে উপজেলার সদর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে ঘর ভেঙে পড়লে চাপা পড়ে নয়া বিবি (৫২) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়।
লক্ষ্মীপুর
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর তেওয়ারীগঞ্জ এলাকায় গাছ পড়ে আনার উল্যাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, তেওয়ারীগঞ্জ বাজার এলাকায় ঝড়ের সময় একটি গাছ চাপা পড়ে আহত হন আনার উল্যাহ। পরে লক্ষ্মীপুরে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আনার উল্যাহ গাছ চাপা পড়ে মারা যান।
হাতিয়া (নোয়াখালী)
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে প্রবল জোয়ারে হাতিয়া উপজেলায় মা ও মেয়েসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন, ২নং চানন্দী ইউনিয়নে নলের চর আদর্শ গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেমের স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৫) এবং তার মেয়ে মরিয়ম নেছা (১০) এবং জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে চরহেয়ার গ্রামের সালাউদ্দিন ব্যাপারীর স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৪৭)। শনিবার বিjfলে এ ঘটনা ঘটে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মো. মইন উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের সময় প্রবল জোয়ারে মা-মেয়েসহ তিনজন ভেসে যায়। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বরগুনা
রোয়ানুর প্রভাবে নদ-নদীতে অধিক উচ্চতার জোয়ারের তোড়ে ও প্রবল বর্ষণে বরগুনা সদর, তালতলী ও পাথরঘাটা উপজেলার ১২টি স্থানে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে এসব এলাকার ৪৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে দেড় লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সেটা জানা সম্ভব হয়নি।