বেফাক মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বারের ইন্তেকাল
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৭:০৩,অপরাহ্ন ১৮ নভেম্বর ২০১৬ | সংবাদটি ৩১৩২৬ বার পঠিত
বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) মহাসচিব মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী ইন্তেকাল করেছেন।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে রাজধানীর মগবাজারের হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
মাওলানা আব্দুল জব্বার অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত ২ নভেম্বর তাকে খিলগাঁও খিদমাহ জেনারেল হাসপাতাল থেকে হলি ফ্যামিলিতে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটায় ১১ নভেম্বর তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তার মৃত্যুর সংবাদে পরিবার-স্বজন, ভক্তকূল ও আলেম-উলামাদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মাওলানা আবদুল জব্বার জাহানাবাদী ১৯৩৭ সালের ২৯ আগস্ট বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার সহবত কাঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম শেখ নাসিম উদ্দীন। মায়ের নাম মনোয়ারা বেগম।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
আবদুল জব্বার ১৯৬১ সালে রাজধানীর বড়কাটারা আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করে ওই মাদরাসাতেই শিক্ষকতা শুরু করেন। পরে যাত্রাবাড়ি জামিয়া মাদানিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হন এবং সেখানে কিছুদিন শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করেন। বেফাকে যোগদানের আগে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রায় ২৭ বছর ধরে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি অনেক মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সাথে জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও আন্দোলনে তার ভূমিকা অসামান্য। লেখক হিসেবেও তার বেশ সুনাম রয়েছে। তার লিখিত গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো, ইসলাম ও আধুনিক প্রযুক্তি, মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, ভারত উপমহাদেশে মুসলিম শাসন ও তাদের গৌরবময় ইতিহাস, ইসলামে নারীর অধিকার ও পাশ্চাত্যের অধিকার বঞ্চিতা লাঞ্ছিতা নারী।
আজ সকালে ইন্তেকালের পর আব্দুল জব্বার জাহানাবাদীর লাশ হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়া হয় তার দীর্ঘদিনের কর্মস্থল বেফাক কার্যালয়ে। সেখানে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতা, মাদরাসার শিক্ষক ও ছাত্ররা তাকে শেষ বারের জন্য দেখতে ছুটে আসেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং হুজুরের জন্য দোয়া করতে থাকেন।
বাদ এশা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় নেতাকর্মী ছাড়াও বিপুল সংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন।
জানাজা শেষে রাতেই মরহুমের লাশ বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
শোক: বেফাক মহাসচিবের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
বিবৃতিদাতারা হলেন- খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই ও মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সহ সভাপতি মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুর রকিব অ্যাডভোকেট, মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল করিম খান, যুগ্মমহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমীন পীর সাহেব বি-বাড়ীয়া, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়বে আমির মাওলানা ইসমাঈল নুরপরী ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ মসজিদ মিশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন ও জেনারেল সেক্রেটারি ড. মাওলানা খলিলুর রহমান আল-মাদানী, খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা মাহবুবুর রহমান, খাদেমুল ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও গওহরডাঙ্গা মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লাম মুফতি রুহুল আমীন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নূরুল ইসলাম আল-আমীন, সহ-সভাপতি জি. এম. রুহুল আমীন, ও সেক্রেটারি জেনারেল শেখ ফজলুল করীম মারুফ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুর রহীম সাঈদ ও সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ রহমত আলী, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের কেন্দ্রীয় আহবায়ক আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী ও সদস্য সচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, জাতীয় শিক্ষক ফোরামের আহবায়ক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান ও সদস্য সচিব মাওলানা এবিএম জাকারিয়া।
দোয়া মাহফিল : মাওলানা আব্দুল জব্বার জাহানাবাদীর ইন্তেকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ বাদ জুমআ এক দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিলে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে বিজয় নগর কার্যালয়ে এক দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরী সভাপতি শেখ গোলাম আসগর ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হকসহ নেতৃবৃন্দ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।