ক্যাবের (CAB) আগুনে পুড়ছে আসাম
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫১:১২,অপরাহ্ন ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ | সংবাদটি ১১৩৬ বার পঠিত
তাজ উদ্দিন, শিলচর, ১১ ডিসেম্বর : ভারতের সংসদে উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (citizenship amendment bill)-এর জেরে উত্তপ্ত সংসদ থেকে রাজপথ। আর এই ক্ষোভের আগুনে আসাম এখন অগ্নিগর্ভ। বাংলাদেশের লাগোয়া রাজ্যটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাগাতার প্রতিবাদী আন্দোলনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সোমবার ভারতীয় সংসদের নিম্ন সদন অর্থাৎ লোকসভায় ২০১৬ সালের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আবার উত্থাপন করা হয়। শাসক বিজেপি জোটের দাপট থাকায় এদিনই ৩১১-৮০ ভোটে বিলটি গৃহীত হয়। তবে উচ্চ সদন রাজ্যসভায় এখনও বিল পাসের বাকি। এরপর রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হলে সেটা কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু মুসলিম বিরোধী এই বিলটি ভারতীয় সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারাকে সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করছে। সংবিধানে সব ধর্মের লোকের সম অধিকারের কথা বলা হয়েছে। আবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান লোকদের নাগরিকত্ব প্রদান করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাদ পড়েছেন মুসলমানরা।
কিছুদিন আগে আসামে এন আর সি অর্থাৎ জাতীয় নাগরিকপঞ্জী করা হয়েছে। এখনও সেটা চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়নি। এন আর সি-তে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন কারণে নাম নথিভুক্ত করাতে সক্ষম হননি তারা। এদের অনেকেই বৈধ ভারতীয় অথচ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে পারেননি। একাংশ আবার বাংলাদেশ থেকে অবৈধ ভাবে ভারতে চলে এসেছেন। এই অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রায় সবই হিন্দু। ক্যাব বা নাগরিকত্ব সংশোধন আইন কার্যকর হয়ে গেলে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবে। মুসলমানরা নিজেদের বৈধ নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য থানা পুলিশ আদালত করবে। আর, শেষমেষ রয়েছে ডিটেনশন ক্যাম্পের মতো আজীবনের জন্য হাজতবাস। বর্তমানে বিনা বিচারে প্রচুর হিন্দু মুসলমান আসামের বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করেছেন। ক্যাব চালু হয়ে গেলে ভারতের বিচার ব্যবস্থা আরও এক তরফা হয়ে যাবে যা কোনও ধর্মের কোনও সচেতন নাগরিকই মেনে নিচ্ছেন না। শুধুমাত্র বিজেপিই ধর্মীয় কার্ড খেলছে।
সংসদে বিলটি নিয়ে বিরোধীরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। এআইএমএম দলের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি ক্ষোভে বিলের কপি ছিড়ে ফেলেন। সাংসদ মওলানা বদরউদ্দিন আজমল বিল বিরোধিতায় সংসদের বাইরে প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। ধর্মীয় সমতা সংক্রান্ত একটি মার্কিন কমিশন তো ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সুপারিশ করেছে।
আসামে মঙ্গলবারের বনধে বরাক উপত্যকা এবং ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় সমানভাবে প্রভাব পড়েছে। দোকানপাট বন্ধ ছিল। রাস্তাঘাটে যান চলাচল করেনি। সোশ্যাল মিডিয়া সরকার বিরোধী পোস্টে ভরে গেছে। ত্রিপুরায় তো মঙ্গলবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আসামেও যে কোনও সময় ইন্টারনেটে নিষেধাজ্ঞা লাগানোর মতো দমন নীতির আশ্রয় নিতে পারে বিজেপি সরকার।