জকিগঞ্জের রেদওয়ান হত্যা, গ্রেফতার ৪
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৬:৫৯,অপরাহ্ন ১৬ মে ২০২১ | সংবাদটি ৩৪৯ বার পঠিত
আহমেদ জামিল, জকিগঞ্জ
ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল রাইডারদের টার্গেট ছিল ২৩ বছর বয়সী মুজিবুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল মামুনের। তাকে সহযোগিতা করেন তার বন্ধু এনাম আহমদ।
অত্যন্ত সুকৌশলে রাতের বেলা ভাড়া করে মোটরসাইকেল চালকদের নিয়ে যান নিজ এলাকা মোগলাবাজারে। গন্তব্য হাওরের পাশে গফুরের বাঁধ এলাকার যাত্রীছাউনি। সেখানে গিয়ে মোটরসাইকেল রাইডারদের থামিয়ে টাকা আনার কথা বলে অপেক্ষা করাতে থাকেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত শুরু করেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে রাইডারদের মোটরসাইকেল ও তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যান।
তবে পরপর দুটি ঘটনার পর শেষ হয়ে যায় তাদের পরবর্তী মিশন। সর্বশেষ উবার চালক রেদওয়ান রশিদ চৌধুরী সৌরভ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের জালে ধরা পড়েন মুজিব ও এনাম। বেরিয়ে আসে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল চালকদের টার্গেট করে ছিনতাই করার সকল পরিকল্পনা। মুজিবুর রহমান সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার ছিছরাবান্দি গ্রামের লয়লু মিয়ার ছেলে ও এনাম আহমদ একই থানার ধোপাকান্দি গ্রামের মৃত খলিল মিয়ার ছেলে।
এ ঘটনায় আরো দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানার খলাগ্রামের বাসিন্দা জুয়েলুর রহমান ও একই উপজেলার ধুলিজুরা গ্রামের বাসিন্দা রায়হান মিয়া।
জানা গেছে, গত ৮ এপ্রিল রাতে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার আদিনাবাদ কাপন গ্রামের মৃত মকদ্দছ আলীর ছেলে মোটরসাইকেল রাইডার গোলাম কিবরিয়া রাজু ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালিয়ে আয় করার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসে নি। পরদিন ৯ এপ্রিল সকালে মোগলাবাজার থানাধীন সিলেট-ফেঞ্জুগঞ্জ সড়কের গফুরের বাঁধ এলাকার যাত্রী ছাউনীর ভেতর থেকে একজনকে মারাত্মক রক্তাক্ত অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে রাজুর স্বজনরা তাকে শনাক্ত করেন।
এ ঘটনায় রাজুর বড় ভাই গিয়াস আহমদ মোগলাবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করলে তা রুজু করা হয়। ভিকটিম রাজু প্রায় একমাস সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরে যান। তাকে বাসায় নিয়ে গেলেও মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে তিনি এখনও ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছেন। রাজু সিলেট নগরের উত্তর বালুচর আল-ইসলাহ-১৮/২ নম্বর বাসায় বসবাস করেন।
একইভাবে গত ১১ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালক সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কামালপুর গ্রামের মৃত নোমান রশিদের ছেলে রেদওয়ান রশিদ চৌধুরী সৌরভকে মোগলাবাজার থানার গফুরের বাঁধ এলাকায় ভাড়ায় নিয়ে যায় তারা। সেখানে নিয়ে যাত্রী ছাউনির পেছনে মুজিবুর রহমান ও তার সহযোগী এনাম আহমদ হাতুরি ও পাথরের টুকরো দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে তার মরদেহ পার্শ্ববর্তী ডুবায় কাদা পানিতে ফেলে যায়। পরে ১৩ মে রাতে তার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
রেদওয়ান হত্যার ঘটনায় তার ভগ্নিপতি আব্দুর রহমান বাদী হয়ে মোগলাবাজার থানায় একটি এজহার দায়ের করেন। এরই প্রেক্ষিতে একই স্থানে দুটি ঘটনার তদন্তে নামে পুলিশ। চালানো হয় সাড়াঁশি অভিযান। শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট নগরের কদমতলী তাজমহল রেস্টুরেন্টের কর্মচারী মজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্যমতে সিলেটের গোলাপগঞ্জ আছিরখাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এনাম আহমদকে। পরে তাদেরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর থানা এলাকার খলাগ্রামের বাসিন্দা জুয়েলুর রহমানের কাছ থেকে রেদোয়ান রশিদ চৌধুরী মোটরসাইকেল ও একই উপজেলার ধুলিজুরা গ্রামের বাসিন্দা রায়হান মিয়ার কাছ থেকে অপর ভিকটিম গোলাম কিবরিয়া রাজুর মোটরসাইকেল উদ্ধার করে। এসময় তাদেরকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর তাদের তথ্যমতে রেদওয়ান রশিদ চৌধুরীর মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়। তাছাড়া অপর ভিকটিম গোলাম কিবরিয়া রাজুর মোবাইল ফোন দক্ষিণ সুরমা থানাধীন দশহাল এলাকা থেকে সামছুল ইসলাম নামে একজন কোরআনের হাফেজের কাছ থেকে থেকে উদ্ধার করা হয়। সামছুল ইসলাম দুই হাজার টাকায় তিনি ফোনটি ক্রয় করেছিলেন। তাকেও পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্ল্যাাহ তাহের জানান, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী। তারা সুকৌশলে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চালকদের নির্জনে নিয়ে ছিনতাই করেন। এক মাসের মাথায় একই স্থানে একই কায়দায় দুটি ঘটনা ঘটান। একটি ঘটনায় উবার চালক রেদওয়ান রশিদ চৌধুরীকে হাতুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। এছাড়া আরেকটি ঘটনায় ভিকটিমকে মৃত ভেবে পালিয়ে যায় তারা। পরে পুলিশ তাকে গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে।
তিনি আরো বলেন, দুটি ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।