২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ প্রথম মুক্ত দিবস: রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতির দাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩২:১১,অপরাহ্ন ২১ নভেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ১৯৪ বার পঠিত
আল হাছিব তাপাদার, জকিগঞ্জ
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মুক্তাঞ্চল জকিগঞ্জ হিসেবে প্রতি বছর এ দিন স্থানীয়ভাবে পালন করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে জকিগঞ্জ প্রথম মুক্তাঞ্চল হিসেবে সেই স্বীকৃতি এখনো মেলেনি। স্বীকৃতির দাবীতে সোমবার প্রথম মুক্তাঞ্চল দিবসে জকিগঞ্জ মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন কমিটি নানা কর্মসূচি পালন করেছেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় মুক্তিযোদ্ধা চত্ত্বর প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাগণ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এরপর মুক্ত দিবসের আনন্দ র্যালি শুরু হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে অংশ নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.কে.এম. ফয়সাল ছাড়াও জকিগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান মাওলানা আফতাব আহমদ, জকিগঞ্জ প্রবাসী ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ফজলুর রহমান, যুবলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি বাবর হোসাইন চৌধুরী, ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর সাহেদ, উজ্জল আহমদ তোফায়েলসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার লোকজন। বেলা সাড়ে ১১টায় স্বীকৃতির দাবীতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনের হলরুমে জকিগঞ্জ মুক্তাঞ্চল বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরাম আলীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ. কে. এম. ফয়সাল। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর। বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা সোনা মিয়া, জকিগঞ্জ এসোসিয়েশন ইউকের প্রতিনিধি, সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল বাসিত খাঁন, ফজলুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক শফিউল আলম মুন্নাসহ মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, দেশের প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা জকিগঞ্জ। মহান মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশে যখন বড় ধরণের যুদ্ধ চলছে ঠিক তখনই ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে জকিগঞ্জ শত্রু মুক্ত করে গৌরব উজ্জল অধ্যায় রচনা করেন। জকিগঞ্জেই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিজয় উৎসব উদযাপন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। কিন্তু আজও প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে পাওয়া যায়নি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে। ২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ শত্রু মুক্ত হবার পর ২৮ নভেম্বর জকিগঞ্জে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সেটা ইতিহাসের পাতায় তুলে ধরে প্রতিবছর ২১ নভেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করতে সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
বক্তারা বলেন, প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতির জন্য জকিগঞ্জের সর্বস্থরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। স্বীকৃতির দাবীতে দেশ বিদেশে নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লালন করতে চায়। তাদেরকে সঠিক ইতিহাস লালনের সুযোগ করে দিতে হবে। বইপুস্তকে প্রথম মুক্তাঞ্চল এলাকা জকিগঞ্জ সেটা অর্ন্তভূক্ত করুন। বক্তারা জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস যাচাই-বাছাই করুন। যাচাই বাছাইয়ে জকিগঞ্জ প্রথম হানাদার মুক্ত এলাকা সেটা প্রমাণে মুক্তিযোদ্ধাগণ সক্ষম হবেন। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে জকিগঞ্জকে প্রথম মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতি রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করে প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ অনুরোধ জানিয়েছেন।