ঢাবির প্রভাষক, আমেরিকায় স্কলারশিপ প্রাপ্ত জকিগঞ্জের রেজওয়ানের সাফল্য
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:২৬:৫৯,অপরাহ্ন ০১ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ৭২৫৯ বার পঠিত
আব্দুল খালিক তাপাদার: কবি বলেছিলেন-” আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে / কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে!”
বেশ ক’বছর যাবৎ মার্কিন মুল্লুকে অবস্থান করছি।আরাম-আয়েশের কমতি নেই।চতুর্দিকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের অপূর্ব সমাহার! তবুও হৃদয়ের গহীনে সাহারাসম শুন্যতা! সে শুন্যতা নিজ দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য!
আমি কলম্বাসের আবিষ্কৃত এই স্বপ্নভুমে বসে প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশকে নতুন রূপে সুখী-সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখি।আমার দেশের মেধাবী-গুণীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।তাঁদের সাথে দেখা করি; আলাপ করি।তাঁদের সাফল্যে উজ্জীবিত হই।
সম্প্রতি আমি আবিষ্কার করেছি,অমিত সম্ভাবনাময় মেধাবী তরুণ সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার রেজওয়ানুল হক মাসুদকে।ঢাবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক এই তরুণ বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ‘ফুলব্রাইট ফরেন স্টুডেন্ট প্রোগ্রাম’ -এর অধীনে ‘সেকেন্ড মাষ্টার্স জোসেফ কর্বেল স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারে’ অধ্যয়নরত।
তাঁর পৈতৃক বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজারস্থ নিয়াগোলে! বাবা মো.আব্দুল জলিল অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবী, মাতা সুফিয়া বেগম গৃহিনী। তাঁরা চার ভাই, এক বোন।ভাইদের মধ্যে একজন সিলেট ওসমানী মেডিকেলে এমবিবিএস অধ্যয়নরত এবং অপর এক ভাই শাবি’র কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়ছেন।নানা বাড়ি জকিগঞ্জ পৌরসভাস্থ হাইদ্রাবন্দ গ্রামে।তাঁর গর্বিত নানার নাম হাজী মুফজ্জিল আলী, নানী রাহেনা বেগম।
সিলেটের রাইফেল’স পাবলিক স্কুল থেকে ২০০৬ সালে এস এস সি পাশ করে রেজওয়ান জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৮ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচ এস সি পাশ করেন। তিনি ২০১৩ সালে ঢাবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম এস এস ডিগ্রী অর্জন করেন। কর্মজীবন শুরু করেন ঢাবি’র একই বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদানের মধ্য দিয়ে।
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী রেজওয়ান জুনিয়র বৃত্তি,ডীনস এওয়ার্ডস, রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক, প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক, মহাথির মোহাম্মদ স্কলারশিপ ও ফুলব্রাইট স্কলারশিপসহ ইতোমধ্যে অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন।আমরা আশাবাদী, এই মেধাবী তরুণ অদূর ভবিষ্যতে নোবেল পদক লাভ করে বিশ্বমাঝে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবেন।জেনে রাখা ভালো, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনেটর জেমস উইলিয়াম ফুলব্রাইট ১৯৪৬ সালে এই প্রোগ্রাম চালু করেন। এ পর্যন্ত ফুলব্রাইট প্রাপ্ত ৫৪ জন গুণী বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পেয়েছেন; আর পুলিৎজার পেয়েছেন ৮২ জন।বাংলাদেশের ড.ইউনুস, ড.কবীর চৌধুরী ও ড.নীলিমা ইব্রাহীমও এই স্কলারশিপ পেয়েছিলেন।
গত ১৭ই ডিসেম্বর আমার প্রিয় ভাতিজার সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলো।দুপুর বারোটায় চাচা লোকমান উদ্দীনসহ তিনি আমার বাসার সামনে এসে ফোন দেন এবং কাপড় পরিয়ে নিয়ে যান সোজা লোকমান ভাই’র বাসায়।সেখানে অনেক্ষণ আড্ডা হলো।কথা হলো বিভিন্ন বিষয়ে।জানালেন, বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা।পাশাপাশি উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করার পর শিক্ষকতায় মনোনিবেশ করার বিষয়েও দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন। তাঁর মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে বহির্বিশ্বের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নের কোন বিকল্প নেই।
দুপুরের খাবারসহ দীর্ঘ আলাপচারিতায় মুগ্ধ হলাম।দেশে থাকা তাঁর গর্বিত পিতার সাথে ফোনালাপ হলো।ছেলের সাফল্যে তিনি উজ্জীবিত। তিনি তাঁর ছেলের উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।
শান্ত-ভদ্র ও মার্জিত চরিত্রের রেজওয়ান আড্ডা শেষে নিজ গাড়িতে করে আমার বাসায় পৌছিয়ে দেন।তাঁর সাথে তোলা কয়েকটি ছবি আমার এ্যালবামে সযত্নে সংরক্ষণ করেছি।
অ-নে-ক বড় হও রেজওয়ান! লেখক: সাবেক সভাপতি জকিগঞ্জ প্রেসক্লাব। বর্তমানে আমেরিকা প্রবাসী।