জকিগঞ্জে প্রতিমা বিসর্জনে সম্প্রীতির মিলনমেলা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৩৮:৩৭,অপরাহ্ন ২৫ অক্টোবর ২০২৩ | সংবাদটি ৩২ বার পঠিত
উৎসবমুখর পরিবেশে আবেগ-উচ্ছ¡াঅ চোখেরোোংলল জল আর শেষবারের মতো তেল-সিঁদুর পরিয়ে ধান, দূর্বা, মিষ্টি দিয়ে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গাকে বিদায়ল জানিয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। মঙ্গলবার পৌর শহরের কাস্টমঘাটস্থ কুশিয়ারা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়। বিজয়া দশমীর দিন মন্ডপে মন্ডপে ভক্তদের মধ্যে বিষাদের ছায়া ছিল। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, মন্ত্রপাঠ ও সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠে নারীরা। মর্তলোক থেকে কৈলাসে দেবীকে বিদায় জানাতে নেচে গেয়ে মাতোয়ারা হয়ে সেজেছিলেন উৎসবের বর্ণিল রঙে। প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে বিকেলে তিনটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন পুজামন্ডপ থেকে শোভাযাত্রাসহ নেচে গেয়ে কাস্টমঘাটে এসে প্রতিমা বিসর্জন করেন পূজার্থীরা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এ উৎসবকে ঘিরে ভারত-বাংলার দুই তীরের বসেছিলো ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজারো মানুষের মিলনমেলা। আনন্দে মেতে ওঠে সীমান্ত ঘেঁষা এ নদীপাড়ের নানা ধর্ম-বর্ণের হাজারো মানুষ। ঢাকঢোল, কাসর, করতাল, মন্দিরা, বাঁশি এবং শঙ্খ’র ধ্বনিতে মুখরিত হয় গোটা এলাকা। ভারত-বাংলার নদীর দুই তীরে দু-দেশের প্রতিমা বিসর্জন দেখতে অগণিত লোক সমাগম ঘটে। অসংখ্য মানুষের পদচারণয় মুখরিত হয়ে উঠে জকিগঞ্জ শহরের কাষ্টমঘাট ও ভারতের কাষ্টমঘাটস্থ অখন্ড মন্ডলী মন্দিরের আশপাশ এলাকা। কয়েক যুগধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে এ উৎসব ভারত-বাংলাদেশের দুই তীর এভাবেই চলে আসছে।
বিজয়া দশমীতে পূজার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে বিসর্জন ঘাটে আসেন রাজনীবিদগণের পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ কর্মকর্তা, সাংবাদিক, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ জকিগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। প্রতিমা নিরঞ্জন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য, ডিবি পুলিশ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসের ডুবরি দল, আনসার সদস্যরা ছিল সর্তক অবস্থায়। ভারতের করিমগঞ্জেও দেখা গেছে সেখানকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান মঞ্চে উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি সঞ্জয় চন্দ্র নাথের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রাজস বিশ্বাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মালম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য দেন, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আহমদ আল কবির, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোস্তাক আহমদ, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম ফয়সাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) আবু সুফিয়ান,জকিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াহিয়া আল মামুন, জেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বুরহান উদ্দিন আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দর, জকিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামিম আহমদ, জকিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আব্দুল আহাদ, জেলা পরিষদের সদস্য ইফজাল আহমদ চৌধুরী, জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সাজনা সুলতানা হক চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা রওশন শ্যামলী, জকিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) দিলিপ কান্ত নাথ, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কামরুজ্জামান কমরুসহ জনপ্রতিনিধিগণ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ সময় বক্তারা বলেন, বিশ্বদরবারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত বাংলাদেশ। আবহমান কাল থেকে আমাদের দেশের মানুষ পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে আসছে। সরকার সকল ধর্মের মানুষের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। জকিগঞ্জ উপজেলায় যুগ যুগ ধরে সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। পুরনো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আরও সুদৃঢ় করতে সবাইকে অবদান রাখতে বক্তারা আহবান জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ. কে. এম. ফয়সাল জানান সর্বজনীন ৯৫ ও একক ৫ টি মিলে সর্বমোট ১০০ টি মন্ডপে পুজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও উৎসব মুখর পরিবেশে পুজা সম্পন্ন হয়।
জকিগঞ্জ থানার ওসি মো. জাবেদ মাসুদ জানান, এবার জকিগঞ্জে সর্বজনীন পূজা হয়েছে ৯৫ টি ও এককভাবে ৫টি পুজা হয়েছে। কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন মন্ডপ থেকে সনাতন ধর্মালম্বীরা জকিগঞ্জ কাস্টমঘাটে প্রতিমা নিয়ে এসে বিসর্জন দিয়েছেন। পুলিশের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত অনান্য বাহিনীর সদস্যরাও সর্তক অবস্থানে ছিলেন।
অন্যান্যবছরের ন্যায় এবারও কাস্টমঘাটে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে স্টেইজ সহ যাবতীয় ব্যবস্থাপনায় ছিল জকিগঞ্জ পৌরসভা।