অধীনস্থদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো রমজানের শিক্ষা
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০২:৪৭,অপরাহ্ন ১৩ জুন ২০১৬ | সংবাদটি ৭৬৯ বার পঠিত
মুফতি মুতীউর রহমান: রমজানে দীর্ঘ এক মাস রোজা রেখে আমরা রোজা রাখার কষ্ট অনুভব করি। ক্ষুধা ও পিপাসার যন্ত্রণা টের পাই। ফলে অন্য সময় সামর্থ্যহীন লোকেরা অনাহারে অর্ধাহারে যে কী কষ্ট পায় তা সামান্য হলেও আমরা উপলব্ধি করি। ফলে তাদের প্রতি আমাদের দয়া ও করুণার উদ্রেক হওয়াটাই স্বাভাবিক। রমজানের রোজার একটা বাস্তব ফলাফল বা প্রতিক্রিয়াও এটা।
সুতরাং রমজানে অধীনস্থ, কর্মচারীসহ সব বঞ্চিত অসহায় মানুষের প্রতি আমাদের সহানুভূতি ও সহমর্মিতা দেখাতে হবে। বিশেষত রোজাদার অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো রমজানের শিক্ষা।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, রমজানে যে ব্যক্তি তার অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের দায়িত্ব হালকা করে দেবে আল্লাহতায়ালাও তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। (মিশকাত ১/১৭৪)
অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি দেখানো সব সময়ের জন্যই ইসলামের একটি মহান শিক্ষা। হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, শ্রমিক, কর্মচারীরা তো তোমাদেরই ভাই, আল্লাহতায়ালা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন এই যা, সুতরাং যার ভাইকে আল্লাহতায়ালা তার অধীনস্থ করে দিয়েছেন সে যেন নিজে যা খায় তাকেও তা খাওয়ায়। নিজে যা পরিধান করে তাকেও তা পরিধান করায়। (তিরমিজি)
কী মহান, সুন্দর ও অনুপম শিক্ষা। এমন শিক্ষা ইসলাম বৈ অন্য কোনো ধর্মে কি আর দেয়া হয়েছে? রমজানে আমাদের এই শিক্ষার চর্চা করা উচিত। অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে আমরা একসঙ্গে ইফতার করতে পারি। অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও তো ভেদাভেদ ভুলে যেতে পারি। বৈষম্যহীন সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসতে পারি।
আরব বিশ্বে এই দৃশ্য দেখা যায়। মালিক-শ্রমিক, পদস্থ-অধীনস্থের মাঝে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে ভেদাভেদ থাকে না। সবাই একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করে। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মহান শিক্ষা এটা। আরবের লোকেরা অন্তত এ শিক্ষাটা এখনও ধারণ করে আছে।
অপরদিকে আমাদের দেশে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। শ্রমিক-কর্মচারীদের হীন-নীচজ্ঞান করা হয়। তাদের সঙ্গে বসে খেতে অনেকেই নাক ছিটকায়। বাসার কাজের মেয়ে বা গৃহকর্মীরা কষ্ট করে রান্না করে। রান্নায় সহযোগিতা করে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে, তাদের বাসি-পঁচা খাবার খেতে দেয়া হয়। ভালোটা তাদের দেয়া হয় না। এটা আদৌ উচিত নয়। গর্হিত কাজ।
হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, কারও খাদেম যদি তার জন্য খাবার রান্না করে তাহলে সে যেন তাকে তার সঙ্গে বসিয়ে সেই খাবার থেকে খাওয়ায়। যদি তা নাই করে তাহলে অন্তত তাকে যেন তা থেকে দু-এক লুকমা খেতে দেয়। (তিরমিজি)
ইসলামের এই মহান ও অনুপম শিক্ষা সারা বছরের জন্য। তবে অন্তত রমজানে বিশেষ করে এই শিক্ষার চর্চা করা উচিত। নিজে রোজা না রেখে রোজাদার কর্মচারী ও শ্রমিকদের ওপর সাধ্যাতীত কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া, তাদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করা যে কত নিকৃষ্ট কাজ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রমজানে এই নিষ্ঠুরতা বর্জন করা উচিত।
রমজান মাসে প্রতিদিনই ইফতারির সময় দোয়া কবুল হয় বলে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত আছে। নিজের, পরিবারের, দেশ, জাতি, রাষ্ট্রের সর্বোপরি গোটা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য ইফতারির সময় যেন আমরা মহান আল্লাহর দরবারে কায়মনবাক্যে প্রার্থনা করি। আশা করি তিনি আমাদের দোয়া কবুল করবেন।