নির্মমতা ইসলামের প্রতীক নয়
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:২৪:০৮,অপরাহ্ন ১৫ জুলাই ২০১৬ | সংবাদটি ১২৭৩ বার পঠিত
সম্প্রতি দেশে হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম। একশ্রেণির বিকৃত মস্তিষ্কের মানুষ অদৃশ্য শক্তির ক্রীড়নক হয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। রমজান ও ঈদের মতো পবিত্র দিনে তারা ইসলামের নামে মানুষ হত্যায় মেতে উঠছে। তবে সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন ইসলামের সঙ্গে এসব কর্মকাণ্ডের বিন্দুমাত্রও সম্পর্ক নেই। হত্যা, গুম, অপহরণ এ ধরনের কোনো অপরাধকেই ইসলাম সমর্থন করে না। প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্যে নিরপরাধ মানুষকে যারা হত্যা করে তারা মানবতার শত্রু, ইসলাম তাদেরকে ঘৃণা করতে বলেছে। কারণ তাদের কোনো ধর্ম নেই। পবিত্র কোরআনে নরহত্যাকে চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ যার হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তোমরা তাকে হত্যা করো না।’ বিশ্বের সব ধর্ম নরহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। নিরীহ মানুষকে বিনা বিচারে মেরে ফেলার চেয়ে ভয়াবহ পাপ আর সমাজে নেই।
নরহত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে ইসলামি শরিয়ত প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছে। প্রকাশ্যে বা গোপনে যেভাবেই হোক, হত্যাকারীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে দুনিয়ার আদালতে এর ন্যায়বিচার করতে হবে। অন্যথায় তাকে আখেরাতের আদালতে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘কোনো মুমিনের জন্য সমীচীন নয় যে, সে অন্য মুমিনকে হত্যা করবে, অবশ্য ভুলবশত করে ফেললে অন্য কথা। আর কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে চিরকাল অবস্থান করবে। আর আল্লাহ তার প্রতি ক্রুব্ধ হয়েছেন ও তাকে অভিশপ্ত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।’
ভয়ানক নরহত্যার জঘন্যতা এবং হত্যাকারীর জন্য কঠোর শাস্তির কথা হাদিস শরিফেও উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া ধ্বংস করে দেয়ার চেয়ে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ কিয়ামতের দিন নরহত্যার বিচার করা হবে সবার আগে। তারপর অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হবে।
সমাজে ফেতনা-ফ্যাসাদ, মানবিক বিপর্যয় ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। ইসলাম মানবতাবাদ ও মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি ধর্ম। একথা শুধু শ্লোগানসর্বস্ব নয়, বরং প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এর উজ্জ্বল নজির বিদ্যমান। ইসলামের শত্রুরাও একথা স্বীকার করতে কুণ্ঠিত নয় যে, এই ধর্মটি মানুষের দরদ যতুটুকু বুঝেছে তা বোঝেনি অন্য কোনো ধর্ম। ইসলামের সহজাত ধারা মানবতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি বহমান। ইসলামের প্রদীপ্ত শিখার দ্রুত বিচ্ছুরণের পেছনে এটি বিশেষ কারণ হিসেবে চিহ্নিত। দেড় হাজার বছর পরে এসে কেউ ইসলামের নামে হত্যাকাণ্ডের মতো জঘন্য বিষয়কে চালিয়ে দিতে চাইলে তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না। জঙ্গিবাদকে অতীতে যেমন এদেশের মানুষ ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন ভেবেছে, এখনও তাই ভাবছে এবং ভবিষ্যতেও ভাববে।
ইসলামের মূল উপাদান মানুষ। মানুষকে ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে ইসলামের পথে আনার কথা বলা হয়েছে। মানুষ হত্যা করে কখনও ইসলাম কায়েম হবে না। ইসলাম বিস্তার লাভ করেছে উদারতার গুণে। সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য ইসলামে জিহাদের মতো ফলপ্রসূ বিধান রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পরোক্ষ ইশারায় দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা কখনো ইসলাম সমর্থন করতে পারে না। ইসলাম মানুষের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধের যে বীজ বপন করে দিয়েছে তার নজির আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ইসলামের মর্মবাণী হচ্ছে মানুষের জন্য, জীবনের জন্য সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সহানুভূতি। মানুষের প্রয়োজনে মানুষ। সভ্যতার মূল উপাদান মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ আঞ্জাম দিয়েছে ইসলাম। ইসলামের আদর্শে আদর্শবান কারো জন্য মানুষকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। প্রতিটি মুসলমানকে মানবতাবাদী হওয়া তার ঈমান ও আদর্শের দাবি। ইসলামের নবী আর্তমানবতার সেবায় অনন্য উদাহরণ স্থাপন করে গেছেন। মানুষের দুঃখ, দুর্দশা, ব্যথা-বেদনা ও পীড়ন-দহনে তিনি যেমন ব্যথিত হতেন তেমনি তা লাঘবের জন্য গ্রহণ করতেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। একজন নগণ্য মানুষও যেকোনো সমস্যায় পড়ে তার কাছে এলে তিনি তাকে কোনো দিন নিরাশ করেননি। মদিনায় যে কল্যাণ রাষ্ট্র নবীজী গড়ে তুলেছেন তা মানুষকে হত্যার মাধ্যমে করেননি। হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা, আন্তরিক দরদ আর আকাশসম উদারতা দিয়ে তিনি মানুষের মন জয় করেছিলেন। বর্তমান সময়েও যারা ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করবে তাদের মধ্যে সবার আগে মানবতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। যাদের চরিত্রে নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা ফুটে ওঠে তারা আর যাই হোক কখনও ইসলামের প্রতিনিধি হতে পারে না। তাই আসুন সবাই সজাগ হই, ইসলাম সম্পর্কে জানি; ইসলামের নামে কেউ কোনো অপকর্ম করতে চাইলে সম্মিলিতভাবে প্রতিহতের চেষ্টা করি।