প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পাউবোর বৃহৎ প্রকল্প জকিগঞ্জের পাম্প হাউজ চালু হচ্ছে
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:০৪:২৮,অপরাহ্ন ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ১৫৪ বার পঠিত
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে পাউবোর বৃহৎ প্রকল্প জকিগঞ্জের পাম্প হাউজ চালু হচ্ছে
আল মামুন, জকিগঞ্জ: বলা হয় ‘মাছ সুপারী ধান জকিগঞ্জের প্রাণ’। জকিগঞ্জের মাছের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রুপকথার কিচ্ছার মতো। কালের করাল গ্রাসে অনেক প্রজাতির মাছই আজ বিলুপ্ত । সুপারী এখনো জকিগঞ্জের অহংকার হলেও ধান উৎপাদন কমেছে আশংঙ্কানকভাবে। আদিকাল থেকেই জকিগঞ্জের জমির উর্বরা শক্তি ছিল ভাল। এক সময় জকিগঞ্জে প্রচুর ধান উৎপাদন হতো । ধান উৎপাদনে সবচে বড় ভ’মিকা ছিল ছোট বড় শতাধিক জলাশয় ও খালের। এর মধ্যে ছিল রহিমপুরী , সেনাপতির , মছকন্দর , পীরের, শিকার মাহমুদ, নাথের , মাদার ,তেলি , মিলিটারী , কাপনা , জায়গীরদারি , বরজান, বিয়াবাইল, শিবের, বাবুর,ছাগলী, কুদালী, হাতিদারা, কুনাই,মরইর, মুরাদ, সুনাম খাল বিখ্যাত। এসব খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় মরে যায় তালগাং ও কুলগাং। যৌবন হারায় মইলাইট ও বালাইর হাওড়। প্রয়োজনের সময় শুকিয়ে যায় জলাশয়গুলিও। সময়ের ব্যবধানে খালগুলি ভরাট হয়ে গেলে ধান উৎপাদনে ভাটা পড়ে। এখানে কৃষিতে সেচ ব্যবস্থা মোটেই দেখা যায়নি। স্থানীয় কৃষি সম্পূর্ণ প্রকৃতি নির্ভর । ফলে বাধ্য হয়েই কৃষকরা বছরে একটি মাত্র এক ফসল করেন। বছরজুড়েই পতিত থাকে মাঠের পর মাঠ।
সিলেটের উত্তর পূর্ব দিকে ‘আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমানো’ ভারতের সুউচ্চ খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে দেশের মানচিত্রে পাখির ঠোঁটের মতো বাড়তি জায়গাটুকুই জকিগঞ্জ। বরাককন্যা সুরমা কুশিয়ারা বিধৌত জকিগঞ্জে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে একটি পাম্প হাউজ স্থাপন ও জকিগঞ্জের বৃহৎ খাল রহিমপুরী খাল পুনরায় খননের উদ্যোগ নেয় সরকার। হাওর ও কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে জকিগঞ্জে আপার সুরমা-কুশিয়ারা মহাপ্রকল্পের অধীনে বরাক মোহনার ৩ কি,মি, পশ্চিমে ২০১০ সাল থেকে রহিমপুর খালের উৎসমুখে একটি পাম্প হাউজ নির্মাণ ও রহিমপুরসহ এই চেইনের বেশ কিছু খালের উন্নয়ন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। প্রকল্পের সুবিধার্থে ২০০৯ সালে কুশিয়ারা নদীর পাড়ে খালের উৎসমুখে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৬ সালে খাল উন্নয়ন ও পাম্প হাউজের নির্মাণ কাজ শেষ করে পাউবো। রহিমপুর খালে পুনরায় পানি প্রবাহ চালু করলে উৎসমুখে নির্মিত বাঁধ অপসারণ করতে গেলে বাঁধা দেয় ভারত। বিষয়টি সুরাহা করতে ২০১৬ সাল থেকে দুই দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের বৈঠক শেষে গত ২১ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয় ও চুক্তির খসড়া প্রস্তুত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে ৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের সঙ্গে হওয়া ৭টি সমঝোতা চুক্তির মধ্যে অন্যতম কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি।
চুক্তি অনুযায়ী, কুশিয়ারা নদী থেকে রহিমপুর খাল দিয়ে ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় শুকনো মৌসুমে চাষাবাদে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন। একইসঙ্গে উপকৃত হবেন কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার উপজেলার কিছু অংশের কৃষক।
আগাম বন্যা থেকে আউশ ফসল বাচাঁনো, নিশ্চিন্তে বোরো উৎপাদনসহ জলবায়ুর প্রভাব থেকে ফসল সুরক্ষার লক্ষ্যে “আপার সুরমা কুশিয়ারা” মহাপ্রকল্পের অধীনে পানি উন্নয়ন বোর্ড(পাউবো) সিলেটের জকিগঞ্জে বৃহত্তর সিলেটের বৃহৎ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ১০ হাজার ৬শ হেক্টও জমি আসবে সেচের আওতায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.শেখ ফরিদ বলেন, বর্তমানে জকিগঞ্জে চাষাবাদ প্রকৃতি নির্ভর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অনেক পতিত জমি কৃষির আওতায় আসবে। ফলে বছরে অতিরিক্ত আরো ২০ হাজার মে.টন ধান উৎপাদিত হবে।
পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, ‘পাম্প হাউস ও খালের উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৬ বছরে খালের অনেকাংশ আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে। আশা করছি দ্রুততম সময়ে সকল আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে বাঁধ অপসারণ ও পাম্প হাউজ চালু করতে পারলে আগামী শুকনো মৌসুমেই এলাকাবাসী উপকৃত হবেন।’
সিলেট-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, এটি একটি বৃহৎ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়ন হলে গোটা জকিগঞ্জসহ ভাটি অঞ্চলে কৃষির চেহারা পরিবর্তন হয়ে যাবে।