জকিগঞ্জ বার্তার ‘’মুখোমুখি’’ বারহাল ইউপি চেয়ারম্যান; নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন মোস্তাক
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৩:০৫,অপরাহ্ন ০১ এপ্রিল ২০১৬ | সংবাদটি ২১৫১ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: জনপ্রিয় ও সর্বাধিক পাঠক প্রিয় সংবাদ মাধ্যম জকিগঞ্জ বার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের ‘’মুখোমুখি’’ হতে চায়। স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিশ্চিত করতে প্রথমেই বারহাল ইউপির চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর সাথে ‘’মুখোমুখি’’ হই। বুধবার বিকেলে পরিষদের কক্ষে আয়োজিত ‘’মুখোমুখি’’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিগণ, অনলাইন ইউজার, মুঠোফোনে অনেকের প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানের সার্বিক সঞ্চালন করেন জকিগঞ্জ বার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক এনামুল হক মুন্না। সহযোগিতায় ছিলেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো: আলম উদ্দিন ও বারহাল ইউপি প্রতিনিধি মো: সাইফুর রহমান।
নিম্নে প্রশ ও উত্তর:
বিএনপি নেতা তোফায়েল আহমদ চৌধুরী: ডিজিটাল ইউন্নয়নের কথা বলছেন কিন্তু শাহাগলী বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাজার পর্যন্ত কোন বাতি নেই তা হবে কিনা?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: আজ (বুধবার) সমন্বয় সভা আমি প্রস্তাব রেখেছি। প্রকল্প হাতে নিয়েছি আশাবাদি এই সাপ্তাহের মধ্যে বৈদ্যুতিক বাতি এবং ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত করা হবে। তাছাড়া মাদ্রাসার সামনের রাস্তায় পানি জমাট বাধে তারও ব্যবস্থা হাতে নিয়েছি। আশাবাদী মাস খানেকের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।
সাংবাদিক এখলাছুর রাহমানঃ আপনি এক সময় জামায়াত ইসলাম দলের সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু বিভিন্ন সময় দেখা যায় আওয়ামীলীগের মানুষগুলো আপনার পক্ষে দেখা যায় এটা কিভাবে সম্ভব?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: বাংলাদেশ একটি গনতান্ত্রিক দেশ। তাই যে কেউ যে কোন দলের সাথে থাকতে পারে এটা নগরিক অধিকার। কিন্তু মানুষের মন জয় করতে হলে তা ব্যক্তির চরিত্রের উপর নির্ভর করে।
সাংবাদিক এখলাছুর রাহমানঃ আপনি জানেন আগামী নির্বাচন দলীয় প্রতিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনি তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে আসছেন? আপনি কি মনে করেন আওয়ামীলীগের মানুষগুলো কি আপনার সাথে থাকবে?
মোস্তাক আহমদঃ আমি আশাবাদী মানুষ প্রতীকের দিকে না চেয়ে আমার দিকে তাকাবে, আমার উন্নয়নের দিকে তাকাবে, আমার আদর্শের দিকে তাকাবে।
সাংবাদিক এখলাছুর রাহমানঃ গত নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বেশ কিছু মানুষে প্রকাশে আপনার সাথে মাঠে কাজ করেছে। কিন্তু নির্বাচিত হলে যৌথ বাহিনী আপনার বাড়িতে কেন তল্লাশি চালিয়েছিল?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: যৌথ বাহিনী আমার বাড়ীতে তল্লাশি চালিয়েছিলো ঠিক। কিন্তু তাঁরা আমার বাড়িতে তল্লাসি চালানোর পর বাড়িতে বলে আসছে যে তাঁরা ভুল তথ্যে আমার বাড়িতে তল্লাশি চালায়। হয়তো কোন কুচক্রী মহলের চক্রান্ত ছিলো।
সাংবাদিক এখলাছুর রাহমানঃ আপনি জানেন বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ সরকার, আপনার কি মনে হয় যে বর্তমান নির্বাচন সুষ্টভাবে সম্পন্ন হবে?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: আমি আশাবাদী নির্বাচন অবাধ, সুষ্টভাবে অনুষ্ঠিত হবে এবং ইনশাআল্লাহ্ আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত হবো।
আওয়ামী লীগ নেতা ও মানবাধিকার কর্মী সৈয়দ রিয়াজ উদ্দিন পুতুলঃ বারহাল ইউনিয়নে মিকির খেলা, জুয়া খেলা ও মদ খাওয়ার মত কিছু অসামাজিক কার্যকলাপ চলে এ বিষয়ে আপনি কি কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: এ বিষয়ে আমরা প্রসাশনের সাথে একাদিক বার কথা বলে পদক্ষেপ গ্রহন করে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। আগামীতে এইটা পুরোপুরি নির্মুল করার ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
যুব নেতা সদিউল হোসাইনঃ বিগত উপ নির্বাচনের আগের নির্বাচনে আপনি আপনার নিজ কেন্দ্রে ভালো ভোট পেয়েছিলেন কিন্তু বাটইশাইল, বালিটেকা ও কোনগ্রাম কেন্দ্রগুলোতে তুলনামূলক কম ভোট পেয়েছিলেন। দেখা গেল এই কেন্দ্রগুলোতে বিপুল ভোট পেয়ে সাবেক চেয়ারম্যান মিসবাহ জামান নির্বাচিত হন। পরে তিনি মামলা জনিত কারনে বরখাস্ত হলে পুনঃনির্বাচনে আপনি এই তিনটি কেন্দ্রে বিপুল পরিমানে ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আগামী নির্বাচনে যেখানে মিসবাহুজ জামান নৌকা প্রতীক নিয়ে আবারও আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী, সেখান থেকে আপনি কতটি ভোট আশা করেন?
মোস্তাক আহমদঃ যেহেতু এই বছর দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মিসবাহ জামান থাকবেন। জনগন মিসবাহ জামানকেও দেখেছে, আমাকেও ১৫মাস দেখেছে সুতরাং আমি আশাবাদী গত বছরের চেয়ে এবারের নির্বাচনে এই কেন্দ্রগুলোতে আরও বেশি ভোট পাব………ইনশাআল্লাহ্।
যুব নেতা সদিউল হোসাইনঃ আপনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে সদস্য ছিলেন, তখন আপনি জানতেন যে ইউনিয়নের জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। কিন্তু আপনি যখন চেয়ারম্যান পদে আপনার নির্বাচনি প্রচারণায় অথন জনগনকে ওয়াদা দিয়েছিলেন নির্বাচিত হলে ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নির্মান করবেন। নির্বাচিত হওয়ার দেড় বৎসর চলে গেলে এখন পর্যন্ত কমপ্লেক্স নির্মান করতে পারেননি? এভাবে আর কত চোখে দোলা দিবেন?
মোস্তাক আহমদঃ আমি জনগনের চোখে ধুলা দেইনি। ইউনিয়নের জায়গা নিয়ে আপোষ মিমাংশার কথা ছিলো। আপনারা জানেন দু’টি পক্ষ হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে একে অপরকে সুযোগ না দেওয়ায় আমরা বারহাল বাসী পেছনে রয়েছি। ইনশাআল্লাহ্ সমাধান হলে আমরা সরকারের প্রসেস মোতাবেক বিল্ডিং নির্মাণ করতে পারবো।
কলেজ ছাত্র ইসমাঈল চৌধুরী ফয়সলঃ আপনি বলছেন ইউনিয়নের জায়গা নিয়ে মামলা চলছে। মামলা যদি চলে থাকে তাহলে আপনি যে ইউনিয়নের সামনে শহীদ মীনার নির্মান করতে যে ব্যয় হয়েছে তা কে বহন করবে সরকার না আপনি?
মোস্তাক আহমদঃ শহীদ মীনার যেখানে নির্মান করা হয়েছে এই জায়গায় কোন মামলা নেই। শহীদ মীনার নির্মান করতে অনেকে বাঁধা দিলে তাদের বাঁধাকে উপেক্ষা করে আমরা বাঙ্গালী জাতিকে এটা উপহার দিয়েছি।
৪নং ওয়ার্ড সদস্য ছালিক আহমদ: বিগত সময় বা বর্তমান সময়ে ইউনিয়নে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন আপনি পুনঃরায় নির্বাচিত হলে কার্যক্রম তেমনই চালিয়ে যাবেন?
মোস্তাক আহমদঃ ইনশাআল্লাহ্ আমি পুনঃরায় নির্বাচিত হলে আমার কার্যক্রম আরও বেগবান হবে।
বাটইশাইল থেকে কলেজ ছাত্র মোঃ রুহিন আহমদ চৌধুরীঃ আপনি নির্বাচনের পূর্বে আমাদের বলছিলেন, নির্বাচিত হলে প্রথমে আপনি বাটইশাইল-বালিটেকা রাস্তায় কাজ করাবেন এখন পর্যন্ত করেছেন কি না ? এবং আপনি বলছেন ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে নামাযের ব্যবস্থা করবেন, তাও কি করা হয়েছে?
মোস্তাক আহমদঃ ইউনিয়ন কমপ্লেক্সে নামাযের ব্যবস্থা আছে। এবং বাটইশাইল-বালিটেকা রাস্তার টেন্ডার হয়েছে শিগগির কাজ শুরু হবে।
কোনাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক এখলাছুর রাহমানঃ শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। আমাদের ইউনিয়নে দুইটি হাই স্কুল সহ বেশ কয়টি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। বিশেষ করে কয়টি প্রথমিক স্কুলে শিক্ষক স্বল্পতা ও অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। ইতো মধ্যে ২-৩টি স্কুলে ভবন নির্মান হয়েছে যেখানে আপনার অবদান রয়েছে। ১৫মাসে আপনি কতটুকু করতে পেরেছেন বলে মনে করেন বা আগামীতে নির্বাচিত হলে শিক্ষা বিষয়ে কি কি করবেন?
মোস্তাক আহমদঃ আমি এই বৎসর নির্বাচিত হওয়ার পর কোনাগ্রাম, মুহিদপুর ও বড়কাপন এই তিনটি স্কুলে কাজ বাস্তবায়ন করানো হয়েছে যা আগামী সাপ্তাহের মধ্যে ট্রেন্ডার হবে। আর শিক্ষক স্বল্পতার বিষয়ে আমরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে উত্তাপন করি। আসলে বাংলাদেশেই শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে। আমি আবারও নির্বাচিত হলে এই সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো।
ছাত্র তো জুনেদ আহমদ রুমেল: আপনি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে কি কাজ করেছেন?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: প্রায় ৩লক্ষ টাকা ব্যয়ে পরিষদের চত্বরে একটি শহীদ মিনার স্থাপন করেছি। ভবিষ্যতে আরো কিছু করারও ইচ্ছে আছে আমার।
প্রবাসী রুবেল আহমদ: শাহগলী বাজারে ভেজাল বিরোধী অভিযান ও ফুটপাত দখল মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে কি না?
মোস্তাক আহমদ চৌধুরী: ভেজাল খাবার ও পণ্য গুলো রোধ করতে হবে। ফুটপাত দখল মুক্ত করা উচিত। এসব সমস্যা স্থানীয় বাজার কমিটির সাথে সমন্বয় করে আমাদের এগুতে হবে।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যানের পক্ষে সচিব বিধান চন্দ্র বিগত সময়ের উন্নয়ন কা্র্যক্রমের কর্মকান্ড তুলে ধরেন। বলেন, এলজিএসপি প্রকল্প ২ এর ২০১৪-১৫অর্থ বছরে ১৭টি প্রকল্প ২৩, ৫৬০০০টাকা, ১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৫টি পকল্প ১৮, ৫৩০০০ টাকা। বাকি ৮টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। টিআর, কাবিখা ১৪-১৫অর্থ বছরে টিআর ১২টি প্রকল্প ১৫মে: টন। একই অর্থ বছরে ১৪টি প্রকল্পে ৩, ০০০০০টাকা। কাবিখার ৫টি প্রকল্পে ৩২মে: টন। ৯টি টিআর প্রকল্পে ১৬মে: টন, কাবিখা ৩টি প্রকল্পে ১৮মে: টন। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি: ১৪-১৫অর্থ বছরে ৯টি প্রকল্পে ১৬, ৫২০০০টাকা। একই অর্থ বছরে ৯টি প্রকল্পে ১৭, ০১০০০টাকা, ১৫-১৬ অর্থ বছরে ২১, ৫২০০০টাকা, একই অর্থ বছরে ২১, ৫২০০০ টাকার কাজ শুরু হবে। এছাড়া এডিপি, হাটবাজার ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত বরাদ্ধ দিয়ে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। ৫৪, ০০০ জনকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধিত করা হয়েছে। গ্রাম আদালত গঠন করে বহু মামলা সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তি চলছে। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, পরিষদ চত্বরে ফুলেন বাগান নির্মাণের কথাও তুলে ধরা হয়।