জকিগঞ্জ বার্তার “মুখোমুখি” অনুষ্ঠানে সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান যা বললেন
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৬:৩২,অপরাহ্ন ২৪ মে ২০১৬ | সংবাদটি ৩৬৪১ বার পঠিত
নিজস্ব প্রতিবেদক: হাজার হাজার পাঠকের প্রিয় নিউজ পোর্টাল জকিগঞ্জ বার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকমের সাথে ‘’মুখোমুখি’’ অনুষ্ঠানে ৬নং সুলতানপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।বলেছেন ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও ইউনিয়ন পরিষদের বিগত ৫বছরের নানা কর্মকান্ডের। তিনি ১মে ১৯৫৭ সালে গণিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম দেলওয়ার বখত চৌধুরী, মাতা মরহুমা জাহানারা বেগম চৌধুরী। তিনি ২০১১সালে ২৫৮৫ ভোট পেয়ে প্রথম বারের মত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নেতা। তিনি ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের প্রাথমিক সদস্য হয়ে রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়। ১৯৭৪-৭৫ সালে মৌলভীবাজার কলেজ শাখার কার্যকরি কমিটির সদস্য, ১৯৭৬-৮২ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ১৯৮২-৮৭ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য, ১৯৮৭-৯৬ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৯৭-২০০৫ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০১২-১৪ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। আগামী ৪জুন ইউপি নির্বাচন-২০১৬ এ তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
শনিবার দুপুরে অনুষ্ঠিত ‘’মুখোমুখি’’ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জকিগঞ্জ বার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক এনামুল হক মুন্না। সহযোগিতায় ছিলেন ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মো: আলম উদ্দিন।
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ ভালো।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ আপনি নির্বাচনে আসার উদ্দেশ্য কি ছিলো?
একবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ আমার উদ্দেশ্য ছিলো জনগণের সেবা করা। কারণ জনগনের সেবা করা আমি ইবাদত মনে করি।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ নির্বাচিত হয়ে আপনি কতটুকু সেবা দিতে পেরেছেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ইউনিয়নের দায়িত্ব আমি যথাযথভাবে পালন করে সেবার মান ভালো করার চেষ্টা করেছি।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ নির্বাচনে আসার পূর্বে আপনি জনগণকে কি কি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? এবং তা কতটা পালন করতে পেরেছেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ নির্বাচনে আসার পূর্বে জনগণের কাছে আমার একমাত্র ওয়াদা ছিলো সরকার থেকে ন্যায্য পাওনা আদায় করে যথাযথ ভাবে আপনাদের কাছে পৌঁছে দেব। এবং এটাও বলেছিলাম আমার মাধ্যমে আপনাদের কোন হক নষ্ট হবে না। আমি আমার এই ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেছি বলে মনে করি।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ তার মানে কি আপনি নিজেকে সফল চেয়ারম্যান মনে করেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ আমি মনে করি সার্থক এবং সফল হয়েছি।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ শিক্ষা ক্ষেত্রে আপনার কি কি ভূমিকা ছিলো?
একবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ আমার ইউনিয়নের প্রাইমারি স্কুল গুলো নিয়মিত মনিটরিং করেছি। যার ফলে আমার ইউনিয়নের ১৪টি প্রাথমিক স্কুলের মাঝে প্রতি বছর পিএসসিতে ১১-১২টি স্কুলে শত ভাগ ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। যদিও আর্থিক সহায়তা খুব একটা দিতে না পারলেও যে সব স্কুলে অবকাঠামোগত সমস্যা ছিলো তাদেরকে কিছুটা আর্থিক সুবিধা দিতে পেরেছি।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ যোগাযোগ ক্ষেত্রে আপনি কি কি ভূমিকা নিয়েছিলেন?
একবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ যোগাযোগ ক্ষেত্রে বড় ধরনের কোন কাজের ক্ষমতা ইউনিয়ন পরিষদের নেই। এই গুলো এমপি সাহেবের নিয়ন্ত্রনে হয়ে থাকে। তারপরেও এমপি সাহেবের সহায়তা ছাড়া ডিপার্টন্টের সাথে যোগাযোগ করে আমার ইউনিয়নে ২কি.মি. পাকা সহ প্রায় ৮কি.মি. সংস্কার করেছি। আর ইউনিয়ন পরিষদের স্বল্প পূজি থেকে বিভিন্ন রাস্তায় ইট সলিং ও ছোট-বড় ১২টি কালভার্ট নির্মাণ করতে পেরেছি।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ ইউনিয়ন কমপ্লেক্স নির্মান করা হবে কি?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (বিদায়ী)টিটন খীসা মহোদয়ের সহযোগিতায় ইউনিয়ন কমপ্লেক্সের কাজের জন্য ৯৬,৮৪০০০টাকা বরাদ্দ হয়ে লে-আউট হয়ে গেছে। বৃষ্টির জন্য হয়তো কাজ শুরু হতে দেরি হচ্ছে।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ ইউনিয়নে বরাদ্ধকৃত সকল প্রকল্প কি শত ভাগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে?
একবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ কোন সন্দেহ নাই শত ভাগ বাস্তবায়ন হয়েছে। কারণ, বিগত বছর গুলোতে আমার পরিষদের কোন সদস্য-সদস্যার বিরুদ্ধে কোন প্রকার অভিযোগ আসেনি। যার জন্য আমি মুনে করি এই প্রকল্প গুলো শত ভাগ বাস্তবায়িত হয়েছে। বিগত চার অর্থ বছরে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মাঝে চার বারই শ্রেষ্ট ইউনিয়ন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ আপনি আপনার কাজের মাধ্যমে জনগণের কতটা আস্থা অর্জন করতে পেরেছেন বলে আমি মনে করেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ এ বিষয়ে আগামী ৪জুন নির্বাচনে আমি বুঝতে পারবো যে জনগণের কতটা আস্তা অর্জন করতে পেরেছি। তবে আমার বিশ্বাস জনগন যেভাবে আমাকে সাড়া দিচ্ছেন, হয়তো জনগণ আবার আমাকে নির্বাচিত করবেন।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ প্রথম বারের মত ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আপনি আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীক পেয়েছেন, আপনার কাছে কেমন লাগছে?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ আমি প্রথমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা-কে আমার অন্তরের অন্তস্থল থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এই জন্য যে, ইউপি নির্বাচনে আমাকে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছেন। আমি দীর্ঘ দিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক জীবনের চাওয়া এবং পাওয়া মাঝে এটি অনেক বড় একটি অর্জন।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ দলীয় ভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জনগণ কতটুকু সেবা পাবে?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ স্থানীয় সরকার সম্পূর্ণ একটি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আমার বিশ্বাস চেয়ারম্যান দলীয়ভাবে নির্বাচিত হলেও ইউনিয়ন পরিষদে জনগণের সেবায় দলীয় প্রভাব পরবে না এবং নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান থাকবে।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ আগামী নির্বাচনে আপনার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী কাকে মনে হয়?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ সঠিকভাবে বলা কঠিন। যেহেতু গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলহাজ্ব বুরহান উদ্দিন আমার নিকটতম প্রতিদ্বন্দী ছিলেন আমি মনে করি এই নির্বাচনেও তার সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা হতে পারে।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ জনগণ কি আবার আপনাকে নির্বাচিত করবে বলে আপনি মনে করেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সেবার মাধ্যমে জনগণের সাথে যে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, জনগণ আবার আমাকে নির্বাচিত করবে।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ আপনি আবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে জনগণকে নতুন কি কি দিতে পারবেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ যেহেতু আমার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ আজকের ক্ষমতাসীন দল, সেই হিসেবে জনগণ আবার আমাকে নির্বাচিত করলে আগামীতে এই ইউনিয়নকে একটি সমৃদ্ধ মডেল ইউনিয়নে রুপান্তরিত করবো।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ নির্বাচন কি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হবে আপনি কি মনে করেন?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থেকে সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
জকিগঞ্জ বার্তাঃ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা সকলেই আপনার সাথে আছে কি না?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ স্থানীয় সরকার নির্বাচন হিসেবে আমি দেখছি কোনো কোনো ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক অন্য প্রার্থীর সাথে কাজ করছেন। তবে মূল ধারার সিংহভাগ নেতা কর্মী আমার সাথে আছেন।
অনুষ্ঠান চলাকালে অনলাইনে এবং ফোন কলের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের কাছে প্রশ্ন রাখেন্,
মোঃ সুবহান, কুয়েত থেকেঃ ৫নং ওয়ার্ডে কাচার চক গ্রামে কি কি উন্নয়ন করা হয়েছিলো বিশেষ করে রাস্তার যে বেহাল দশা এ বিষয়ে আপনার পদক্ষেপ কি ছিলো?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একলঃ এই গ্রামের একটি পিচ রাস্তা করা হয়েছে।
ভার্সিটি ছাত্র নিকুঞ্জ বিহারী বিশ্বাস: মির্জারচকে যাওয়ার পথে কেরাইয়া রাস্তায় যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করা হয়নি কেনো?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল: ইতোমধ্যে যাত্রী ছাউনী নির্মাণে বরাদ্ধ হয়েছে। জায়গা ঠিক করে এটি নির্মাণ করা হবে যথা শিগগির।
ইসলাম উদ্দিন: মির্জারচকের রাস্তাটি পানিতে ডুবে যায়, নৌকা দিয়ে রাস্তা পারাপার, আপনার পদক্ষেপ নেই কেনো?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল: ইতোমধ্যে রাস্তাটিতে মাটি ভরাট করা হয়েছে। মূলত রাস্তার পাশে মাটি না পাওয়াতে উচু করা যায়নি। ভবিষ্যতে রাস্তার কাজ সম্প্রসারণ করা হবে।
যুগান্তর বিশ্বাস: ৩নং ওয়ার্ডের মির্জারচক যাওয়ার আগে কেরাইয়ায় নির্মিত ব্রিজের এপ্রোচে মাটি নেই কেনো?
ইকবাল আহমদ চৌধুরী একল: ব্রিজের পাশে মাটি না পাওয়াতে এ সমস্যা। বৃষ্টির পানি সরে গেলে ব্রিজের এপ্রোচে মাটি দেওয়া হবে।
ইউপি চেয়ারম্যান জনগণের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি সুলতানপুর ইউনিয়নের সর্বস্থরের জনগণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, বিগত নির্বাচনে আমাকে আমার পারিবারিক, সামাজিক পরিচয়ে আপনাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিলেন। এই বার ভিন্ন আঙ্গিকের নির্বাচন। সুতরাং আপনারা আগামীতে সুলতানপুর ইউনিয়নের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আবারও আপনাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করুন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন , সুলতানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বাইছ, আব্দুল কাইয়ুম খছরু, ইউপি সচিব আব্দুছ ছাত্তার, কুহেল রানা চৌধুরী, মুকদ্দছ আলী, আব্দুল খালিক, বদরুল হাসান, রাহেলা বেগম ও নাজমা বেগম।
বিগত ৫বছরে উল্লেখযোগ্য সর্ব মোট বরাদ্ধ এলজিএসপি ৫৯,৭৬,১৫২ টাকা, টিআর ৮০,০০০মেঃটঃ, কাবিখা ৯৪,০০০মেঃটঃ, কর্মসৃজন ৩৫,২০,০০০টাকা, নিজস্ব/বিবিধ ৭,৬৮,০০০টাকা।