এসপির স্ত্রী খুন; পুলিশের ঘরে বেড়ে ওঠা পুলিশের ঘরে সংসার
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৫৩:২৭,অপরাহ্ন ০৬ জুন ২০১৬ | সংবাদটি ৯৩৯ বার পঠিত
যারা দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য দিন-রাত ছুটে বেড়িয়েছেন, যে স্বামী জঙ্গি তাড়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জলা-জঙ্গল দাবড়ে বেড়িয়েছেন, সেই পরিবারের আদরের মেয়েটি, স্নেহের পুত্রবধূটি, ভালোবাসার স্ত্রীটিকে নৃসংশভাবে খুন করল দুর্বৃত্তরা। মাতৃহারা হলো দুই পুলিশ পরিবারের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অবুঝ দুটি শিশু।
পুলিশ পরিবারে বেড়ে ওঠায়, পুলিশ পরিবারে সংসার পাতায় এই পেশার কাজ আর ঝুঁকির বিষয়ে ভালোই জানতেন মাহমুদা আক্তার মিতু। কিন্তু সেই ঝুঁকি তার ওপর এসে এমন নির্মভাবে বর্তাবে তা কি ভেবেছিলেন কখনো!
অবসরের যাওয়ার আগে মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন ছিলেন পুলিশের ওসি। বাড়ি পটুয়াখালী। শ্বশুর আবদুল ওয়াদুদ মিয়াও চাকরি করেছেন পুলিশে। তাদের বাড়ি মাগুরায়।
স্বামী বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার। জঙ্গি দমন অভিযানে সাহসিকতার জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রশংসা পেয়েছেন, পুরস্কৃত হয়েছেন স্বামী। এসব অর্জনের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে নানাভাবে হুমকিও বেড়েছে জঙ্গিদের তরফ থেকে। তাই পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন মাহমুদা আক্তার মিতু।
তাই বলে জীবন তো থেমে থাকে না। রবিবার সাতসকালে মিতু আর দশজন স্নেহশীলা মায়ের মতো ছেলের হাত ধরে বেরিয়েছিলেন তাকে স্কুলবাসে তুলে দেবেন বলে। কিন্তু বাসা থেকে মাত্র কয়েক শ গজ দূরে জিইসি মোড়ের কাছে ছেলের হাত থেকে মিতুকে ছিটকে নেয় দুর্বৃত্তদের মোটরসাইকেল।
ছয় বছরের ছেলে মাহির চোখের সামনে মোটরসাইকেলের তিন আরোহী তার মাকে প্রথমে ছুরিকাঘাত, তারপর গুলি চালায়।
মাত্র ৪৮ সেকেন্ডের এক হিংস্রতায় মিতুর প্রাণ কেড়ে নিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। তখন হতবাক আদরের ছেলেটি। ছোট মেয়েটি তখন বাসায়, গৃহকর্মীর কাছে।
মাহির বাবা সম্প্রতি পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকার পুলিশ সদরদপ্তরে যাওয়ার আগে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উত্তর-দক্ষিণ জোনের দায়িত্বে ছিলেন। চট্টগ্রামের ওআর নিজাম রোডে ১৫ তলা একটি ভবনের অষ্টম তলার বাসায় থাকতেন ছয় বছরের ছেলে আর চার বছরের মেয়েকে নিয়ে।
সাধারণত সকালে একজন কনস্টেবল এসে বাবুল আক্তারের ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যেতেন। পরে মিতু তার ছোট মেয়েকে নিয়ে যেতেন কাছের এক স্কুলে। সেখানে প্লে গ্রুপে আদরের মেয়েটি।
রবিবার সকালে কনস্টেবলদের কেউ না আসায় মিতু নিজেই ছেলেকে নিয়ে বের হন তাকে স্কুলবাসে তুলে দিতে। কে জানত এটিই হবে তার শেষ যাত্রা। ওদিকে মায়ের জন্য অনন্ত অপেক্ষার প্রহর আদরের মেয়েটির।