মেয়েকে বুকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন মা
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২১:৫৭,অপরাহ্ন ২৯ জুন ২০১৬ | সংবাদটি ১৬৩৩ বার পঠিত
সেই ২০০০ সালের কথা। শিখার বয়স তখন ৭ বছর। বাবা-মাকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে কিশোরগঞ্জ থেকে আনা হয় ঢাকায়। এরপর পাচারকারী চক্র তাকে বিক্রি করে দেয়। নানা হাত বদলে, ঘুরতে ঘুরতে এক পর্যায়ে চলে আসে খুলনা শহরের টুটপাড়া জোড়াকল এলাকায়। সেখানে এক বাড়িতে কাজ নেয়। তবে নানা অত্যাচারের শিকার হয়।
বছর খানেক এভাবে নানা পরিস্থিতির শিকার হতে হয় শিখাকে। অবশেষে ২০০১ সালে শহরের মিয়াপাড়া এলাকার মহৎহৃদয় ব্যক্তি আবুল হোসেন নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন কিশোরীকে। সন্তান স্নেহে লালন পালন করতে থাকেন। গত ১৫ বছর ধরে সেখানেই বড় হয় শিখা। এখন তার বয়স প্রায় ২৩ বছর।
কিছুদিন আগে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীরা খোঁজ পায় শিখার। তারা কিশোরগঞ্জে তার পরিবারের সদস্য স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। খোঁজ মেলে শিখার বাবা-মার। শিখা কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুমদি এলাকার গিয়াস উদ্দিন ও রহিমা বেগমের মেয়ে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) মা রহিমা বেগম ও চাচা মফিজ উদ্দিন মেয়ে শিখাকে নিতে খুলনা আসেন। পরে খুলনা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সহযোগিতায় নগরীর মিয়াপাড়া কায়েমিয়া মাদরাসা গলির আবুল হোসেন মিয়া বাড়ি থেকে শিখাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
১৬ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজে পেয়ে খুশিতে কাঁদতে থাকেন মা মেয়ে। পরে পুলিশের মাধ্যমে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মা ও মেয়ের মিলনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে আবুল হোসেনের পরিবারের সদস্যরাও। চার বোন আর এক ভাইয়ের মধ্যে শিখা মেজো। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদতে থাকেন মা রহিমা বেগম।
খুলনা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও গনমাধ্যম কর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শিখা ২০০১ সাল থেকে নগরীর নগরীর টুটপাড়া পাইপের মোড় এলাকার আবুল হোসেন মিয়ার বাড়িতে রয়েছে। সেখানে সেই ৮ বছর বয়সের শিখা এখন ২৩ বছর বয়সের তরুণী। এখানে তার আদর ভালোবাসা ঠিকই ছিলো কিন্তু হারিয়ে যাওয়া মা-বাবার জন্য মন কাঁদতো। তার মনে আছে বাবা-মা ও গ্রামের নাম। পাশের বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে গল্পের মাঝে তার কষ্টের কথা প্রকাশ করে। সেই কাজের মেয়ে অসহায় শিখার কষ্টের কথা তার মনিবকে জানায়। ঘটনাক্রমে সেই ব্যক্তি খুলনায় বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার অফিসে বিষয়টি অবগত করে সাহায্য চান।
চলতি বছরের গত মে মাসে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম ও আজিজুর রহমান শিখার বিষয়টি তাদের কিশোরগঞ্জ জেলা কমিটিকে অবগত করেন। তারা সেখানে হোসনপুর উপজেলার প্রতি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের আগে ও মাইকে প্রচারণা চালান। তাদের এ আন্তরিক প্রচেষ্টায় অবশেষে শিখার পরিবারের সন্ধান পান তারা।
খুলনা মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, ‘মেয়েটার পরিবার খুঁজে পাওয়া আমাদের জন্য এক বিরাট সফলতা’।