আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩১:৩৭,অপরাহ্ন ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ | সংবাদটি ১২০০ বার পঠিত
মো: মঈনুল হকঃ প্রতি বছরের মতো এবারো আসছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিবসটি বাঙ্গালী জাতির কাছে যেমন শোকের তেমনি বিশাল গৌরবের দিন। বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। বাংলা মায়ের ভাষা। বাংলা আমাদের রাষ্ট্র ভাষা। বাংলা ভাষায় আমরা প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি। কবিতা সাহিত্য ও সংস্কৃতিক চর্চা করতে পারছি। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে রূপ দিতে তৎকালীন আমাদের ছাত্র সমাজ এদিনে অনেক আন্দোলন করে। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করার জন্য সংঘটিত হয়েছে অনেক সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, ইতিহাস। যার মূল্য আমরা শোধ করতে পারব না। এ দিবস আমাদের ভাষা অর্জনের ক্ষেত্রে অনেক ইতিহাস স্মরণ করিয়ে দেয়। আজ আমাদের তরুণরা এসব ইতিহাস জেনে ভাষা অর্জনের মমত্ববোধ তাদের মধ্যে যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি সর্বস্তরে বাংলাভাষার বিস্তারে এগিয়ে আসবে।
১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা যখন করতে চেয়েছিলেন তখনই তার প্রতিবাদে জেগে উঠে ছাত্র জনতা, শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। প্রতিবাদের ভাষা ও ব্যাপকতা বেড়ে চুড়ান্ত রূপ ধারণ করে ১৯৫২ সালে। এ বছরের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে ছাত্র জনতা। পূর্ব বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। ফেব্রুয়ারী মাসের ২১ তারিখে বাংলাভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সালাম জব্বার রফিকসহ নাম না জানা আরও অনেক ছাত্র জনতা শহীদ হন। তাদের প্রাণের বিনিময়ে বাংলাভাষা রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই আন্দোলনের পর থেকেই অগ্রসর হতে থাকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে বাঙ্গালি জাতির আত্মনিয়ন্ত্রনাধিকারের দাবি।
বাংলা ভাষা ইতিহাসের সবচেয়ে পুরাতন রূপ। যতটুকু জানতে পারি ড. শহীদুল্লাহর হিসেব অনুযায়ী ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা ভাষা সাহিত্যের আরম্ভকাল ছিল। হাজারো বছরের ঐ পুরাতন ভাষাকে স্বগৌরবে ফিরিয়ে আনতে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে দিতে হয়েছে আমাদের ভাষা শহীদদের তাজা রক্ত ও প্রাণ। তাই ৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী বাঙ্গালী জাতির কাছে যেমন শোকের তেমনি স্মরণীয় দিন। আমাদের ছাত্র জনতা সেদিন জীবনকে উৎসর্গ করে এগিয়ে আসায় আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন দেশ ও বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক সম্মান। তাই বলা যায় একুশ ছিল বাঙ্গালীর নব যুগের শুভ সূচনা। ৫২ এর একুশ ছিল নিজেদের ভাষা রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবহারের পূর্ণ অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।
হাজারো বছরের পথ পেরিয়ে মাতৃভাষার যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার পূর্ণতা ও গৌরব উজ্জ্বল আসনে উপনিত হয় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের সূচনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জন্ম ঘটেছিল। ৯৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘের উদ্যোগে ঘোষণা করা হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তখন থেকে জাতীয় দিবসটি হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে আমাদের ভাষার মর্যাদা বেড়ে যায়। আমাদের জাতীয় জীবনের আশা আকাঙ্খার তাৎপর্য বেড়ে যায়। একুশ ছিল এতদিন শহীদ দিবস তাহা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হয়ে গেল। বিশ্বের জ্ঞান ভান্ডারের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটে গেল। নিজেদেরকে বিশ্বের কাছে উপস্থাপনের সুযোগ হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ফলে মাতৃভাষার মর্যাদা দ্বিপ্তিময় হয়ে উঠল।
একুশের চেতনা জাগ্রত রাখতে জাতীয়তা বোধের বিকল্প নেই। আমরা এ দিনটির পবিত্রতা রক্ষা ও সঠিক মূল্যয়ণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করব। বাঙ্গালীর রক্তে ভেজা একুশে ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বব্যাপী যে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত তার সঠিক মূল্যায়ণ করব। একুশের অনুপ্রেরণা চেতনা সকল বাঙ্গালীর মনে যেন জাগ্রত থাকে। বাংলা ভাষার সাহিত্য ও সংস্কৃতির যাত্রা অব্যাহত থাকবে। বাংলা ভাষার কল্যাণ ও চেতনা ও ভাষার প্রয়াস সর্বক্ষেত্রে অব্যাহত থাকবে। মাতৃভাষার স্বার্থ সংরক্ষণ ও প্রসার কল্পে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস অপরিহার্য।
লেখকঃ কলামিস্ট, গ্রাম ও ডাক- মুনশীপাড়া, জকিগঞ্জ, সিলেট।