বাংলাদেশকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন ভারত
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৩১:৫৯,অপরাহ্ন ০৭ মার্চ ২০১৬ | সংবাদটি ৯৯৮ বার পঠিত
চার বছর আগের আফসোস ফিরে এলো রোববার এশিয়া কাপের ফাইনালে। সেবার ছিল পাকিস্তান, এবার ভারত। ২০১২ সালের ফাইনালে পাকিস্তানের সঙ্গে দুই রানের হার, কাঁদিয়েছিল সাকিব-মুশফিকসহ গোটা দেশকে। তবে ভারতের কাছে বৃষ্টিবিঘ্নিত ফাইনালে ৮ উইকেটের হারের পর আফসোস ঠিকই ভেসে বেড়াল মিরপুরের আকাশে, কিন্তু আহাজারি বা ক্রন্দন নেই বললেই চলে। টি২০ ফরম্যাটের এশিয়া কাপে দল ফাইনালে খেলছে, এমন তৃপ্তিই দেখা গেল টাইগার সমর্থকদের চোখে মুখে।
তবে বাস্তব অবস্থা ভিন্ন, বৃষ্টির কারণে ১৫ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ভারত জিতেছে একক দাপট দেখিয়ে। ব্যাট হাতে বাংলাদেশ ১৫ ওভারে ১২০ রান করে প্রতিপক্ষের সমীহ আদায় করলেও বোলিংয়ে মাশরাফিরা ছিল নখদন্তহীন বাঘ। যেখানে কোহলি-ধাওয়ানের ব্যাটে চড়েই এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এশিয়া কাপে ভারতের এটি সর্বোচ্চ ষষ্ঠ শিরোপা। পাঁচ শিরোপা জেতা শ্রীলঙ্কা নেমে গেল দ্বিতীয় স্থানে। বাংলাদেশের সান্ত্বনা, দুইবার রানার্স আপ।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ফাইনাল। ঘন্টা দেড়েকের বৃষ্টির পর খেলা নেমে আসে ১৫ ওভারে। সেখানে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে ১২০ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্রুত রোহিতকে হারালেও ধাওয়ান-কোহলির ব্যাটে সাত বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌছায় ভারত তাও দুই উইকেট হারিয়ে।
বল হাতে বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় ওভারেই ব্রেক থ্রু এনে দেন পেসার আল আমিন হোসেন। নিজের প্রথম ওভারেই বিদায় করেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মাকে। ১.৩ ওভারে আল আমিনের বলে প্রথম স্লিপে সৌম্যের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পাঁচ বলে ১ রান করা রোহিত। নিজের প্রথম ওভারে আল আমিন দেন মাত্র তিন রান, তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট।
রোহিত দ্রুত আউট হলেও ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন কোহলি ও ধাওয়ান। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তারা সংগ্রহ করে ৯৪ রান। শেষ অবধি ৪৪ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৬০ রান করে ধাওয়ান বিদায় নেন তাসকিনের বলে পয়েন্টে সৌম্যের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ভারতের দলীয় রান তখন ৯৯। জয়ের জন্য কোহলিকে সঙ্গে করে বাকি কাজটুকু সেরেছে অধিনায়ক ধোনি। ১৩.৫ ওভারে আল আমিনকে ছক্কা হাঁকিয়ে দলের জয় সুনিশ্চিত করেন ধোনি। ২৮ বলে ৪১ রানে কোহলি ও ৬ বলে ২০ রানে ধোনি থাকেন অপরাজিত। সেই সঙ্গে ভারতও অপরাজিত থেকেই এশিয়া কাপের শিরোপা জিতল।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ভারতীয় বোলারদের উপর চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন সৌম্য সরকার। যদিও তামিম ছিলেন একটু ধীর লয়ে। চতুর্থ ওভারে আশিষ নেহরার বলে পরপর দুই চার হাঁকিয়ে গ্যালারীতে উন্মাদনা বয়ে আনেন সৌম্য। তবে ৩.৬ ওভারে আশিষ নেহরাকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে মিডঅফে পান্ডের হাতে ক্যাচ তুলে দেন সৌম্য। নয় বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৪৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পাওয়া সৌম্য। দলীয় রান তখন ২৭।
এরপর বেশীক্ষণ টিকতে পারেননি অবশ্য তামিমও। দলীয় স্কোর শিটে তিন রান যোগ হতেই বিদায় তামিমের। ৪.৪ ওভারে বুমরাহর বলে হন এলবির শিকার। সাজঘরে ফেরার আগে তামিম করে যান ১৭ বলে ১৩ রান, চার ছিল দুটি। অনেকটাই টেস্ট মেজাজের ব্যাটিং। তবে ভারতের বিরুদ্ধে দারুণ রেকর্ড ছিল তামিমের। কিন্তু আসল ম্যাচেই জ্বলে উঠতে পারলেন না গেল পিএসএলে ফর্মে থাকা বাংলাদেশের এই হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান।
রান খরায় ধুঁকতে থাকা সাকিব এদিন ভালো করার আভাস দিয়েছিলেন। ক্রিজে এসে তিনটি চার হাঁকান তিনি। কিন্তু তারপরও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। ৯.১ ওভারে স্পিনার অশ্বিনের বলে মিডঅনে বুমরার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। তার আগে করে যান তিন চারে ১৬ বলে ২১ রান।
দ্রুত রান তোলার আবেদন মেটাতে গিয়ে এরপর রান আউটের শিকার হন মুশফিকুর রহীম। তবে তার ভাগ্য খারাপ। পপিং ক্রিজে ব্যাট গেলেও তা ছিল শূন্যে। ফলে ধোনির স্ট্যাম্প ভাঙ্গা বৃথা যায়নি। ৫ বলে ৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। ১১.৩ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর তখন ৭৫ রান। ব্যাট করতে নামে ক্যাপ্টেন মাশরাফি। প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে জাদেজার বলে ডিপ মিড উইকেটে কোহলির হাতে ক্যাচ দেন নড়াইল এক্সপ্রেস। ১ বলে শূন্য রান।
মাশরাফির বিদায়ের সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৫ উইকেটে ৭৫ রান। বল বাকি ছিল ২২টি। মাহমুদুউল্লার ব্যাটিং ঝড়ে শেষ ২২ বলে বাংলাদেশ রান করেছে ৪৫টি। শেষ অবধি মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির ছিলেন অপরাজিত। ১৪তম ওভারে হার্দিক পান্ডের করা বলে একাই ১৯ রান নেন রিয়াদ। এর মধ্যে ছিল দুই ছক্কা ও এক চার। সব মিলিয়ে মাত্র ১৩ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন গ্রেট ফিনিশার রিয়াদ।
অন্যদিকে সাব্বির ছিলেন অনেকটিই শান্ত মেজাজে। ২৯ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন তিনি। ভারতের হয়ে একটি করে উইকেট নেন নেহরা, অশ্বিন, জাদেজা ও বুমরাহ।
সুত্র: বাংলা মেইল