স্বাস্থ্যের সুরক্ষা ও রোজা ডা. এম শমশের আলী
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:০৬:৪৩,অপরাহ্ন ০৭ জুন ২০১৬ | সংবাদটি ১০১৩ বার পঠিত
রোজা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের একটি। মুসলমানরা বছরে এক মাস রোজা পালন করে থাকে। রোজা রাখার ফলে সেহরির পর থেকে ৪-৫ ঘণ্টা যাবৎ খাদ্যবস্তু হজম হয়ে শরীরে শক্তির জোগান দিয়ে থাকে। তারপর শরীরে মজুদ থাকা সুগার যা মাংসপেশি ও লিভারে গ্লাইকোজেন হিসেবে জমা ছিল, তা ভেঙে শরীরে শক্তির জোগান দিয়ে থাকে। মজুদের পরিমাণ ভেদে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত গ্লাইকোজেন জোগান দিতে পারে। তার পরবর্তী সময় মানে বিকাল বেলায় শরীরে জমাকৃত চর্বি ভেঙে শক্তি জোগান দিয়ে থাকে। সুতরাং রোজা রাখার ফলে শরীরের জমাকৃত চর্বি খরচ হয়ে শরীরে চর্বির মজুদ কমিয়ে দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ফলে রোজা সঠিকভাবে পালন করলে এর দ্বারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে, তবে এখানে একটা প্রশ্ন হলো অনেক মানুষের শারীরিক ওজন রোজায় না কমে আরও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, কারণ তারা চর্বি জাতীয় ও অতি চিনিযুক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে তা ঘটে থাকে। বছরের অন্য সময়ের মতো রোজার সময়ও সুষম খাদ্য (ব্যালেন্স ডায়েট) পরিমিত মাত্রায় গ্রহণ করতে হবে বা অতিভোজন পরিহার করতে হবে। রোজাদার ব্যক্তি শুধু অনাহারেই থাকেন না, তার সঙ্গে তার আচার-আচরণও ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে থাকেন, যার ফলে তার মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় রোজার ভূমিকা অপরিসীম। রোজা রাখার ফলে মুসলমানদের অন্তরে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যতা আরও বেশি বৃদ্ধি পায়। মানুষের জাগতিক বিষয়বস্তুর প্রতি ঝোঁক অনেকাংশে কমে যাওয়ায় ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক টেনশন কমে ফলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির ঝুঁকি অনেকাংশে লাঘব হয়ে থাকে। সঠিক নিয়ম মেনে রোজা রাখলে উচ্চরক্তচাপ কমে যায়, হৃদরোগের উপসর্গ কমে রোগী অনেকটা সুস্থবোধ করে এবং ডায়াবেটিস প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলে তাও নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। রোজাদার ব্যক্তিদের বেলায় দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় অনাহারে থাকার ফলে তার পরিপাকতন্ত্রে বিশ্রামের সুযোগ ঘটে। পরিপাকতন্ত্রের অন্য একটি গ্রন্থি যেমন প্যানক্রিয়াস, যা ইনসুলিন তৈরি করে তারও বিশ্রাম এবং ত্রুটি মেরামতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রাথমিক পর্যায়ের ডায়াবেটিস কোনো রূপ মেডিসিন ছাড়াই ঠিক হয়ে যেতে পারে। যারা অ্যালার্জি ও অ্যাজমাজনিত সমস্যায় ভুগছেন তারাও রোজা রাখার ফলে তা থেকে মুক্তি পেতে পারেন বা কমে যেতে পারে। মানুষ শ্বাস-প্রশ্বাস এবং খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে অনেক ধরনের টক্সিন বা বিষাক্ত বস্তু পরিবেশ থেকে গ্রহণ করে থাকে। এসব টক্সিন মানব শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে জমা হতে থাকে, বিশেষভাবে চর্বিতেই প্রায় সব টক্সিন জমা হয়ে থাকে। সঠিক নিয়ম মেনে রোজা রাখলে রোজার মাসে শরীরের চর্বি ভেঙে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার ফলে চর্বিতে জমাকৃত টক্সিন শরীর থেকে বের হয়ে শরীরকে টক্সিনমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এসব টক্সিনের প্রভাবে শরীরে বহুবিধ রোগের উৎপত্তি হয়ে থাকে যেমন- হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, অ্যালার্জি, অ্যাজমা, ডায়বেটিস, বাতরোগ, রক্তরোগ ও ক্যান্সার ইত্যাদি।
লেখক: সি.কনসালট্যান্ট (কার্ডিওলজি), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী, ঢাকা।