বীর মুক্তিযোদ্ধা নোমান উদ্দিনের কিছু বীরত্ত্ব গাঁথা স্মৃতি।
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৮:৩২,অপরাহ্ন ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ৯৪০ বার পঠিত
গত ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে প্রয়াত রায়গ্রাম নিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা নোমান উদ্দিনের ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের কিছু বীরত্ব গাথা স্মৃতি।
২০১১ সালে উনার সন্তানাদির মাধ্যমে এসব বীরত্বের জন্য উপযুক্ত উপাধি লাভের প্রত্যাশায় একটি আবেদন করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রনালয়ে।
তিনি এসব উপাধিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। উনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন জীবন বাজি রেখে কেবল দেশের জন্য। কোন উপাধির জন্য ধরনা দেয়া দেশ স্বাধীনের পর থেকেই উনার অপছন্দ। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের দৌরাত্ম্য দেখে উনি এসব মুক্তিযুদ্ধের ডকুমেন্টের তোয়াক্কা করেননি কোনদিন। তদুপরি উনার সন্তানদের অনুরোধে এই আবেদন করেছিলেন ২০১১ সালে। আবেদনে উনার উল্লেখযোগ্য বীরত্বের কিছু ঘটনাবলী সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছিলো। আবেদনটির সত্যতা স্বরুপ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডারের এবং ঐ সময়কার সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার সাহেবেরও সুপারিশ ছিল।
উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীঃ
১। ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে জকিগঞ্জ থেকে আটগ্রাম হয়ে আগত পাকবাহিনীর একটি জিপ গাড়ি যখন রায়গ্রাম ত্রিমোহনী থেকে আটগ্রামস্থ ওদের ঘাটির দিকে রওয়ানা হয়। তখন তিনি ৩ টি এন্টি ট্যাংক মাইন রাস্তায় স্থাপন করে পাশের ঝোপের আড়ালে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা নোমান উদ্দিন। জিপটি মাইনগুলোর উপর এলে ১ টি মাইনের আঘাতে জিপটি উড়ে যায়। গাড়িতে থাকা ১ জন অফিসার সহ ৬ জন পাক সেনা ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।
২। জুন মাসের ৩য় সপ্তাহে আটগ্রাম সাজিদ রাজার বাড়িতে রাত্রি অবস্থান করেন। আটগ্রাম ঘাটির একেবারে অদুরে এই বাড়িতে কোন মুক্তিযোদ্ধার রাত্রি যাপন রীতিমত দুঃসাহসিক ব্যাপার। সেই রাতেই আটগ্রাম বাস স্টেশনের বাংকার থেকে টিফিন নিয়ে ৩ পাক সেনা সাজিদ রাজার বাড়ি হয়ে আটগ্রাম ঘাটিতে যাচ্ছিল। তিনি সাজিদ রাজার বাড়ি থেকে একা বের হয়ে ঐ ৩ সেনাকে আর্মস সহ আটক করেন। ঘটনাটা অবিশ্বাস্য হলে সত্য ছিল যা এলাকার অনেক প্রবীন মুরব্বি আজও বর্ণনা করেন। তিনি এই ৩জনকে পিছন থেকে ধরেছিলেন। এমনভাবে সুর তুলেছিলেন যে ঘটনার আকস্মিকতায় পাক সেনারা ভেবেছিল অনেক মুক্তি আক্রমণ করেছে। তাই ওরা অস্র ফেলে দিলে তিনি একাই ওদের রশ্মি দিয়ে বেধে ফেলেন অস্রের মুখে। এবং ভারতে একাই নিয়ে যান ঐ রাত্রে।
৩। গেরিলা পদ্ধতিতে সিলেট জকিগঞ্জ রোডের রহিমপুরি খালের ব্রীজ ও পাশের বাঁধ ডেমুলেশনের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
৪। আটগ্রাম তথা জকিগঞ্জ স্বাধীন হওয়ার বেশ কিছুদিন পুর্বে আটগ্রাম ডাক বাংলার পাক হানাদারদের ঘাটির প্রতিরক্ষার দায়িত্বশীল পাক সেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতেও বীর মুক্তিযোদ্ধা নোমান উদ্দিন সাহসিকতার সহিত অংশ নিয়েছিলেন। ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছিলেন আর ৩০/৩২ জন পাক সেনা নিহত হয়েছিল।
সংযুক্ত আবেদনটিতে এরকম ৬ টি ঘটনার কথা উল্লেখ রয়েছে। এমন একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা আমাদের জকিগঞ্জ তথা বাংলাদেশের প্রথম মুক্ত শত্রুঘাটি আটগ্রাম ডাক বাংলা স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন সেটা অবশ্যই গৌরবের। জীবদ্দশায় উনি উনার প্রাপ্ত মর্যাদা পাননি। আল্লাহ যেন উনার পরকালের জীবন শান্তিময় করেন সে দোয়া করি। এরই সাথে রায়গ্রাম ত্রিমোহনাতে একটি চত্তর স্থাপন করে সেটি বীর মুক্তিযোদ্ধা নোমান উদ্দিনের নামে নামকরণের জোরালো দাবী জানাই।
লিখেছেন,
মারুফ আহমদ সুমন
নিহত মুক্তিযোদ্ধা নোমান উদ্দিনের আপন ভাতিজা।
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত)
সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জকিগঞ্জ, সিলেট।