করোনা ভাইরাসঃ আমাদের চিন্তাভাবনা বনাম পরিস্থিতির ভয়াবহতা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১৬:৪৩,অপরাহ্ন ২৩ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ৪৫৭ বার পঠিত
মোঃ বাহার উদ্দিন
⭕কেইস-১
-আম্মু কি রান্না কর?
-পায়েস রান্না করি,তোর ছোট ফুফু আসছে না ফ্রান্স থেকে। দেখা করতে যাবো।
-দেখা করতে যাবা মানে? উনি তো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা।
-হ্যাঁ সেই হোম কোয়ারেন্টাইনেই দেখা করতে যাবো।
⭕কেইস-২
-আব্বা কই যান?
-আরে জামাই আসছে দেশে, দাওয়াত দিতে হবেনা? বাজার করতে যাই।
-দাওয়াত দিবেন মানে? দুলাভাই তো ১৪ দিন বাসা থেকেই বের হবে না। এতো আগে বাজার করে কি করবেন?
-ওই সব হোম কোয়ারেন্টাইন ফরেন্টাইন কি আবার? আপনজনদের সাথে দেখা না করার মত খারাপ অসুখ তোর দুলাভাইয়ের হয় নাই।
⭕কেইস-৩
-দোস্ত, দেশে আইসা পড়লাম।
-আরে দোস্ত আয় মিট করি।
-নারে, আমি তো ১৪ দিন বাসা থেকেই বের হতে পারবো না।
-আরে মিয়া তাতে কি আমরা আইয়া পড়বো তোর বাড়ি। মেলা দিন পরে দেশে আইছস মোলাকাত না হলে কেমনে চলবো?
⭕কেইস-৪
-হ্যালো শুনছো? আমি একটু আম্মাকে দেখতে যাবো, আম্মা খুব অসুস্থ, ফোন দিয়ে কান্না করছিল।
-কেন কি হল আবার?
-এই তো জ্বর, কাশি,গলা, বুক ব্যাথা। ভাইয়া আসলো যে গত সপ্তাহে ইতালি থেকে তারপর থেকে তো বাসার সবার ভাইরাস জ্বর হচ্ছে।
-কি বলো করোনা না তো?
-আরে না কি যে বলো তুমি! করোনা ওদের হবে কেন। ওরা কি পাপ করেছে?
⭕কেইস-৫
-বাবা তুমি না আগামী কিছুদিন বাসায় নামাজ পড়ো প্লিজ। আর মোড়ের দোকানটাতেও চা খেও না। তুমি যত বার চা খাবে, বাসায় বানাতে বলবে।
-কেন রে তুই কি করোনার ভয় পাচ্ছিস নাকি? করোনা আমার হবেনা। আমি ৫ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, পাঁচ বার ওযু করলে করোনা হয়না। ওইসব হচ্ছে কাফেরদের রোগ।
বিশ্বাস করুন আমি ভয়াবহ সময়ের কথা চিন্তা করছি বাংলাদেশের। আল্লাহ না করুক এই করোনা যেটা বাতাবিলেবুর শরবত খেলে আর হয়না! এটা যদি কোনো ভাবে ছড়িয়ে যায়, তবে বাতাবিলেবুর ক্রেতা বিক্রেতা সবাই কিন্তু বিপদে পড়বেন।
আপনার করোনা হবে না, কারণ আপনার রক্তের গ্রুপ ‘ও’। কিন্তু আপনি ভাইরাসটা বহন করলে আপনার মা কিংবা বাবা যাদের কারো রক্তের গ্রুপ ‘এ’ তারা আক্রান্ত হতে পারে।
আপনার বয়স কম? ২০-৪০ হলে আপনি করোনা ভাইরাসে মারা যাবেন না বলে আপনি ভয় পান না।
কিন্তু একবার চিন্তা করুন আপনার বোনটির কথা যার হয়তো অলরেডি এজমার সমস্যা আছে।
আপনার কি ভালো লাগবে আপনার যেই বাচ্চাটার ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো না সে আপনার চোখের সামনে অসুস্থ হয়ে ছটফট করুক?
প্লিজ এখনো সময় শেষ হয়ে যায়নি। এখনো কিছু করার আছে আপনার এবং আমার, আমাদের সকলের। বাংলাদেশ একটা বিশাল জনশক্তি। আমরা কি পারিনা আমাদের অক্ষমতা কে আমাদের ক্ষমতা বানাতে?
সেই জন্য সবার সহযোগিতার প্রয়োজন।
একটা বার ভেবে দেখুন তো- ইতালির মত দেশে এত মানুষ মারা যাচ্ছে, তাদের ডাক্তার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা এতো উন্নত হওয়ার পরেও তারা এখন বৃদ্ধদের চিকিৎসা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে এখন শুধুমাত্র যারা ইয়াং এবং যাদের অবস্থা সিরিয়াস নয় তাদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে আমাদের গরীব দেশ আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা তো দূরের কথা চিকিৎসকরা সব থেকে বড় বিপদে কারণ তাদের না আছে কোনো রকমের কোনো প্রটেকশন না আছে আইসোলেটেড করার সঠিক ব্যবস্থা। তাই করোনা ভাইরাস এর ঝুঁকি ডাক্তারদের সব থেকে বেশি।
আপনার কি ভালো লাগবে যদি আপনার বৃদ্ধ দাদিকে বাঁচানো সম্ভব না বলে কেউ চিকিৎসা দিতে রাজি না হয়? আমরা তো অনেক কিউট জাতি। ভালো লাগবে যদি দেখেন চোখের সামনে নিজের মা বিনা চিকিৎসায় মারা যায়?
আর এখানেই শেষ নয়। করোনা একটা মহামারী। আর মহামারী তে মারা গেলে মানুষ শহীদ হয়। তাই তার গোসল লাগে না। কিন্তু আপনি কি পারবেন বিনা গোসলে আপনারা প্রিয়জন কে কবরে শোয়াতে? কতটা করুন হতে পারে সেই দৃশ্যটা, একটা বার ভেবে দেখবেন আপনার প্রিয় ভাইটা চোখের সামনে মারা যাবে কিন্তু আপনি তাকে ছুঁয়ে দেখতে পারবেন না।
তবে আমরা খুব কিউট জাতি তো, তাই হয়তো ভাইকে জড়িয়ে কান্না আপনি আটকাতে পারবেন না, এবং তারপর আপনার করোনা হওয়া থেকে কেউ আটকাতে পারবে না।
প্লিজ এখনো সময় আছে জেগে উঠুন। স্কুল, কলেজ, অফিস বন্ধ বলেই কক্সবাজারের ঢেউয়ে গা ভাসাতে যাবেন না। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সব বন্ধ করে ঘরে থাকুন। কারণ কোথা থেকে কার করোনা হবে কেউ বলতে পারেনা।
আপনি যা যা করতে পারেনঃ-
*ড্রাইভার কে ছুটি দিন।
*বাসার বুয়াকে ছুটি দিয়ে দিন।
*যতটা সম্ভব বাইরে বের হবেন না।
*জামাতে নামাজ পড়বেন না।
*কারো বাসায় যাবেন না।
*রেস্টুরেন্টে খাবেন না।
*দাওয়াত নিবেন না এবং দিবেন না।
*যাদের একান্তই বাইরে যেতে হয় তারা প্রস্তুতি নিয়ে বাইরে যাবেন।
*বাইরে থেকে আসার আগে বাসায় ফোন করে জানাবেন আপনি আসছেন।
* বাসায় এসেই বাসায় থাকা বাচ্চাদের স্পর্শ করবেন না।
*বাসায় এসে সোজা ওয়াশরুমে যাবেন, গোসল করে এবং ড্রেস চেঞ্জ করে তবেই বাচ্চাদের আদর করবেন।নতুবা আজকে আদর আপনার বাচ্চাদের জন্য কালকে কাল হয়ে দ্বাড়াবে। নিজেদের সেফটি নিজেদের কাছে।
*খাবার নষ্ট করবেন না। পরিমিত খাবার রান্না করবেন।
*বেশি করে ভিটামিন সি খাবেন।
*যাদের বাসার বাইরে না গেলেও চলে, তারা বাসায় বসে আপনজনদের কোয়ালিটি টাইম দিবেন।
দেশের জন্য দোয়া করুন, বিশ্ববাসীর জন্য দোয়া করুন। আর এই সব কিছু করার পরেও যদি আমার বা আপনার করোনায় মৃত্যু হয় তবে সৃষ্টিকর্তা হয়তো সেটাই চেয়েছিলেন। তবে আপনার আমার পক্ষে যতটুকু করার ছিল আমরা করেছি। এটাই সান্ত্বনা।
ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন, সুস্থ্য রাখুন।
লেখক-
মোঃ বাহার উদ্দিন
ম্যানেজার
জনতা ব্যাংক লিমিটেড।
সদস্য
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।