২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ মুক্ত দিবস: রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবী
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৩:১৪,অপরাহ্ন ২১ নভেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ১৩৮ বার পঠিত
২১ নভেম্বর জকিগঞ্জ মুক্ত দিবস: রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দাব
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরের আগেই দেশের যেসব অঞ্চল মুক্ত হয়েছিল তার মধ্যে সিলেটের জকিগঞ্জই সবার আগে শত্রু মুক্ত হয়। সুরমা-কুশিয়ারা বেষ্টিত সিলেটের সীমান্ত উপজেলা জকিগঞ্জ-ই ছিল প্রথম মুক্তাঞ্চল। একাত্তরের ২১শে নভেম্বর সারাদেশের আগে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও এদেশীয় রাজাকারদেরকে পরাজিত করে হানাদারমুক্ত করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এটা ছিল জকিগঞ্জ তথা সিলেট অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ও বীরত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে জকিগঞ্জ সফরে আসেন জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেই সফরে তার দেয়া বক্তব্যই জকিগঞ্জের মানুষের মধ্যে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র রোপণ হয়। রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই জকিগঞ্জের মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ২৫ মার্চের কালরাতে ঢাকায় পাকস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণের খবর পেয়ে জকিগঞ্জের মানুষকে মুক্তিসংগ্রামের জন্য সংগঠিত করতে নেতৃত্ব দেন আবদুল লতিফ এমসি, আবদুল আজিজ (কুটুলা মিয়া), মজিদ উদ্দিন (বলই মিয়া), অ্যাডভোকেট নিছার আলী, মোঃ নূর উদ্দিন, ফয়জুর রহমান মাস্টার প্রমুখ। মুক্তিযুদ্ধে জকিগঞ্জ ছিল ৪নং সেক্টরের অন্তর্ভূক্ত। অধিনায়ক ছিলেন তৎকালীন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত)। সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত দেওয়ান ফরিদ গাজী এমপি ছিলেন এই সেক্টরের বেসামরিক উপদেষ্টা। ৬টি সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত (সিআর দত্ত)। মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানীদের দেশপ্রেম, মাটিকে শত্রুমুক্ত করার অক্লান্ত প্রচেষ্টা বৃথা যায়নি। একাত্তরে সবার আগে ২১শে নভেম্বর ভোরে জকিগঞ্জের মাটিতেই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান মুক্তিযোদ্ধারা। পরদিন জেডফোর্সের অধিনায়ক সাবেক রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়াউর রহমান জকিগঞ্জে প্রবেশ করেন। ঐদিন জকিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক ঐতিহাসিক সভার মাধ্যমে দাউদ হায়দারকে জকিগঞ্জের বেসামরিক প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। শত্রুমুক্ত এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে বীর মুক্তিযোদ্ধা এনাম চৌধুরীকে প্রধান করে মুক্তিযোদ্ধা স্পেশাল কামান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল মজিদ চৌধুরীকে উপপ্রধান করে ও বর্তমান জকিগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খলিল উদ্দিনকে সহকারি কামান্ডার নিয়োগ করে প্রশাসনিক কর্মকান্ড শুরু হয়। এটা জকিগঞ্জ তথা সিলেট অঞ্চলের বীরমুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল বীরত্বগাথা। সেই অগ্নিঝরা দিনে দেশের মুক্তির জন্য জীবন বাজি রাখা মুক্তিযোদ্ধা বা তাদের সহযোগীরা প্রত্যাশা করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম শত্রুমুক্ত মাটি হিসেবে জকিগঞ্জের নাম অচিরেই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবে। দিবসটি উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারো মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নানা কর্মসূচি পালন করবেন।