তুরস্কে অভুত্থ্যান চেষ্টা, সমবেত জনতার কাছে হার মানলো সশস্ত্র সেনারা
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:২২:০৫,অপরাহ্ন ১৬ জুলাই ২০১৬ | সংবাদটি ৫৯৬ বার পঠিত
তুরস্কে সেনাবাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিয়েছে মূলত বেসামরিক জনতা। সরকারের পক্ষে রাজপথে অবস্থান নিয়ে লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভে গুলি চালিয়ে শেষ রক্ষা হয়নি সেনাবাহিনীর একাংশের সদস্যদের। সমবেত জনতার শক্তির কাছে হার মানল অস্ত্রের শক্তি। বেশ কিছু মানুষ জীবন দিয়ে রক্ষা করলো নির্বাচিত সরকার ও গণতান্ত্রিক শাসন।
গত রাতে সেনাবাহিনীর একটি অংশ প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সরকারের পতন ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা নিজেদের অধীনে নেয়ার ঘোষণা দেয়। তারা সরকারি টেলিভিশন স্টেশন দখলে নেয় এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ট্যাংক মোতায়েন করে। ইস্তান্বুলে কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে বাইরেও মোতায়েন করে ট্যাংক।
ঘটনার পর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর মারমারিসে অবকাশ যাপনে থাকা প্রেসিডেন্ট রিসেফ তায়িপ এরদোগান ইস্তান্বুল বিমানবন্দরে ফিরে আসেন।
বিমানবন্দরে নামার পর তিনি তার আইফোনে ফেইস টাইমের মাধ্যমে বলেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়েছে। রাষ্ট্রদ্রোহ এ ঘটনার পেছনে যারা জড়িত তাদের কড়া মূল্য দিতে হবে। পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে দাবি করে তিনি অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ করতে জনগণকে রাজপথে নামতে এবং সমর্থকদের বিমানবন্দরে আসার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে থাকায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট’ বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ লিখেছেন, ‘তুরস্কের (চলমান) সেনা অভ্যুথানের বিরুদ্ধে ইস্তান্বুলে সরকারের পক্ষে যে লক্ষ মানুষ পথে নেমে এসেছে সেটা প্রধানত সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের দেয়া এক সাক্ষাতকারের কারণে। সিএনএনর তুর্কি ভাষার টেলিভিশন স্টেশনকে তিনি এই সাক্ষাৎকার দেন যখন প্রায় ধরেই নেয়া হচ্ছিলো যে অভ্যুথান সফল হয়েছে। সেখানেই তিনি সাধারন মানুষকে পথে নামতে ডাক দেন, অনুরোধ করেন বিমানবন্দরে যেতে। তাঁর সমর্থকরা বিমান বন্দরে যাবার কারণেই এরদোয়ান ইস্তান্বুলে ফিরতে পেরেছেন’।
প্রেসিডেন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে লাখ লাখ জনতা রাজপথে নেমে এসে বিদ্রোহী সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় গণতন্ত্রপন্থি জনতা। এরপর তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ ও সরকারপন্থি সেনারাও। এক্ষেত্রে বিমান বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। বিক্ষুব্ধ জনতা অভ্যুত্থাপের পক্ষে নামা সেনাবাহিনীর অনেক ট্যাংক দখল করে নেয়। তাকসিম স্কয়ার, পার্লামেন্ট ভবন, ইস্তান্বুল ও আঙ্কারায় রাতভর সংঘর্ষে কমপক্ষে ৬০ জন নিহত হয়। যাদের বেশির ভাগই বেসামরিক লোকজন।
শনিবার সকালে প্রেসিডেন্ট এরদোগান বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষমান কয়েক হাজার সমর্থকের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন। এ সময় ইস্তান্বুলের বোসফোরাসে বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্যকে আত্মসমর্পণ করতে দেখা যায়। তারা তাদের ট্যাংক ফেলে দুই হাত উঁচু করে এগিয়ে যান। পরে পুলিশ অভুত্থানে জড়িত ৭৫৪ জন সেনাকে গ্রেপ্তার করে।
এর আগে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইয়ালদ্রিম জানান, ‘অনুমতি ছাড়াই সেনাবাহিনীর একটি অংশ বেআইনি অভিযান শুরু করেছে। এটা কোন অভ্যুত্থান নয়। অভ্যুত্থানে সরকারে কোন পরিবর্তন হয়নি’। এ ধরনের কোন চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না বলে জানান তিনি।
ধর্শনিরপক্ষে তুরস্কে ডানপন্থি এরদোগানের দল রাষ্ট্রক্ষমতায় আছে দ্বিতীয় দফায়। কেন এবং কী অভিযোগে সেনাদের একাংশ তাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দিতে চেয়েছিল, তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি এখনও। তবে ইসলামপন্থি এরদোগানের শাসন নিয়ে তুরস্কে বেশ সমালোচনা আছে। তিনি কর্তৃত্ববাদী নেতা হিসেবেও আবির্ভুত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ‘পলিটিক্স অ্যান্ড গভর্নমেন্ট’ বিভাগের অধ্যাপক আলী রিয়াজ তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘এই ঘটনার আরেকদিক হচ্ছে এই যে, একজন কর্তৃত্ববাদী শাসক হিসবে গত বছরগুলোতে এরদোয়ান গণমাধ্যমের ওপরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, সাংবাদিকদের ওপরে চালিয়েছেন নির্যাতন। মে মাসের গোড়াতে প্রকাশিত এক খবরে দেখা যায় দেশের শীর্ষ স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি সপ্তাহেই দুই একবার আদালতে হাজির হতে হয়, একাধিক সাংবাদিক হত্যার ঘটনাও ঘটেছে, দেশের অস্থিতিশীল দক্ষিণ-পুর্বে কুর্দী সাংবাদিকদের পেটানোর বা আটকের ঘটনা ঘটছে অহরহ, বিদেশী সাংবাদিকরা প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হন অথবা তাঁদের জোর করে বের করে দেয়া হয়। বিরোধীদের মালিকানাধীন গণমাধ্যম জোর করে বা কৌশলে সরকারের সমর্থকদের দখলে তুলে দেয়া হয়েছে। এরদোয়ানের ভরসা ছিলো সরকারি গণমাধ্যমের ওপরে যারা কেবল তাঁর গুনগানেই ব্যস্ত। কিন্ত নিয়তির পরিহাস এই যে, তাঁর সবচেয়ে বিপদের দিনে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে দেশে চালু থাকা একটি বিদেশি গণমাধ্যম’।