এক সত্যবাদি বালিকার কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:৪৬:২৪,অপরাহ্ন ১৯ মে ২০১৬ | সংবাদটি ৩৬৩৯১ বার পঠিত
রায়হান আহমেদ তপাদারঃ ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর(রা:), বিশাল সাম্রাজ্যের সম্রাট তিনি। মহান বীর। সাহসী পুরুষ। তাঁকে ভয় পায় না এমন বীর আরবে কেউ নেই। অথচ এই মানুষের মনটা ছিল কোমল এবং নরম। বিশাল মনের মানুষ তিনি। খলিফা হলে কী হবে, তাঁর ভাবনার যেন শেষ নেই। তিনি সারাক্ষণ জনগণের কথা ভাবেন। প্রজারা কে কষ্টে আছে, কেউ কি না খেয়ে আছে: এমন ভাবনায় তাঁর মন সব সময় ছটফট করে। তিনি জানতে চান তাঁর জনগণের দুঃখ দুর্দশার কথা। তাই তিনি প্রায়ই রাতের আঁধারে বেরিয়ে পড়েন। কখনো একা আবার কখনো ভৃত্য আসলামকে নিয়ে। তাঁর এই ঘুরে বেড়ানো এক মাত্র তার প্রজাদের অবস্থা দেখার জন্য।
একদিন গভীর রাত। মদিনা শহরের মানুষ ঘুমিয়ে পড়েছে। কোথাও সাড়াশব্দ নেই। এমনি এক রাতে মহামতি ওমর (রা:) মদিনার রাস্তায় ঘুরছিলেন জনগণের অবস্থা দেখার জন্য। হাঁটতে হাঁটতে তিনি অনেক দূর এগিয়ে এলেন। চারদিকে নীরব লোকালয়। কেউ জেগে নেই। এক সময় খলিফা খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। তাই তিনি এক ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে খানিকটা বিশ্রাম নেয়ার চেষ্টা করলেন। হঠাৎ তাঁর কানে কিছু মহিলার কথা বলার শব্দ ভেসে এলো। তারা কী জানি বলাবলি করছিল। গভীর রাত অথচ মহিলারা জেগে আছে। কোন আপদ বিপদ হয়নি তো? খলিফার মন বিচলিত হয়ে উঠল। তাই খলিফা কান খাড়া করলেন। তিনি মহিলাদের কথা বোঝার চেষ্টা করলেন।
একজন মহিলা বলছিল, উঠো আমার মেয়ে। তাড়াতাড়ি উঠো। দুধের মধ্যে খানিকটা পানি মেশাও। তাড়াতাড়ি করো। এ কথার পর খানিকটা বিরতি। সাড়াশব্দ নেই। ওমর (রা:) উদ্গ্রীব হয়ে আছেন, মেয়ের কথা শোনার জন্য। একটু পরেই মেয়েটি বলে উঠল, ‘মা’! তুমি এটা কী বলছ? তুমি কি আমাদের খলিফার নির্দেশ জানো না? আমাদের খলিফা আদেশ জারি করেছেন, দুধে পানি মেশানো যাবে না।” এ কথা শোনার পর মা আবারও বলল। তোমার খলিফার কথা শোনার দরকার নেই। যাও দুধে পানি মেশাও। তোমার খলিফা তো আর এখানে নেই “তুমি দুধে পানি মেশালে তিনি কী করে জানবেন, মিছেমিছি তুমি এসব ভেবে সময় নষ্ট করো না। যা বলছি তা করো গিয়ে।””মেয়ে টি তার প্রতি উওরে বলল।’ও মা, মাগো”! তুমি এ কী কথা বলছ! “আমরা সামনা-সামনি খলিফার কথা মান্য করব;”আর একাকী মান্য করব না”এটা হয় না”! কেননা ওমর আমাদের কাজ না দেখলেও “তাঁর স্রষ্টা তো দেখছেন”! তাঁর চোখকে ফাঁকি দেবে কীভাবে?” মা ও মেয়ে উভয়ের কথা খলিফা ওমর (রা:) মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। এবারে মেয়েটির কথা শুনে ওমর (রা:) অবাক হলেন। মেয়েটির খোদাভীতি সততায় খলিফা মোহিত হলেন। আর মহান আল্লাহ্রর কাছে তার জন্য মন ভরে দোয়া করলেন।
সেদিন খলিফার সাথে ছিলেন তাঁর গোলাম আসলাম। রাত গভীর হয়ে এলো। খলিফা আজ আর দেরি করলেন না। তিনি ফিরে চললেন তাঁর আপন ঠিকানায়। তবে রওয়ানা দেওয়ার সময় ওমর (রা:) আসলামকে বললেন, ‘এ বাড়ির ঠিকানা তুমি জেনে রেখো।”এ কথা বলার পর খলিফা সেই স্থান ত্যাগ করলেন। নীরব শহর মদিনার পথে যখন হাঁটছেন তখন খলিফার মনে বার বার নাড়া দিচ্ছিল মেয়েটির সেই সুন্দর কথাগুলো। পরদিন সকালে ওমর (রা:) ভৃত্য আসলামকে ডেকে মহিলার বাড়িতে পাঠালেন। আর বলে দিলেন মা ও মেয়ের খোঁজ নিতে। আসলাম আর দেরি করলেন না। তিনি দ্রুত ছুটে গেলেন ওই বাড়িতে। তাদের খোঁজ খবর নিলেন। তিনি জানতে পারলেন ওই বাড়িতে মা ও মেয়ে দু’জনই থাকেন। মেয়েটির বাবা নেই। আরো জানা গেল মেয়েটি বিবাহিত নয়। আসলাম ফিরে এসে সবকিছু খলিফাকে খুলে বললেন।
আসলামের কথা শুনে খলিফার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তিনি খুশি হলেন, এক অজানা তৃপ্তির আলোয় খলিফার মন যেন ভরে উঠল। হযরত ওমর (রা:) এর তিন ছেলে। এরা হলেন: আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান এবং অসিম। আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান বিয়ে করেছেন। অসিমের এখনো বিয়ে হয়নি। ওমর (রা:) ভাবলেন মেয়েটির সাথে অসিমের বিয়ে দেবেন। খলিফা মেয়েটির সুন্দর চরিত্র ও সততার কথা পুত্র অসিমকে খোলে বললেন। আর তাকে বিয়ে করার প্রস্তাবও ছেলে অসিমকে জানালেন। অসিম বাবার কথায় রাজি হয়ে গেলেন। অবশেষে মেয়েটি হযরত ওমর (রা:) এর ঘরে এলো পুত্র অসিমের বউ হয়ে। সততার কারণে গরীব মেয়েটির ভাগ্য বদলে গেল।
পরিশেষে বলতে চাই; এখন যদি বাংলাদেশে বধূ খুঁজতে যেয়ে সততার মাপকাঠি যাচাই করা হত। তাহলে নিশ্চয় এদেশের ভালো হতো। সংসার জীবনে অল্পতেই যদি মহিলা বা গিন্নিরা তুষ্ট থাকত বা স্বামীরা কম জ্বালাতনের শিকার হতো এবং অফিসে নিশ্চিন্তায় সততার সহিত কাজ করত, তবে কতই না ভালো হত। আমরা সবাই জানি সত্যের জয় অবশ্যসম্ভাবি এর পরও সত্যকে কবর দিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে জীবনকে চলিয়ে যাচ্ছি। কি সাংঘাতিক ব্যায়াপার !! একবার ভেবে দেখুন না। দোয়া করি মহান আল্লাহ্র আমাদের সবাইকে এটা বোঝার শক্তি দান করুন।