দারুল ক্বেরাত মজিদিয়া ফুলতলী; আমাদের ভাবনায়….
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৩৩:০০,অপরাহ্ন ২৭ জুন ২০১৬ | সংবাদটি ৪৯৪৬ বার পঠিত
অধ্যক্ষ মাজেদ আহমেদ চঞ্চল: শামসুল উলামা ফুলতলী সাহেব ক্বিবলা দারুল ক্বেরাত মজিদিয়া বহু
কাল পূর্বে প্রতিষ্ঠা করলেও,আমাদের ছেলেবেলায় তথা আশির দশকে এরঅভাবনীয় উত্থান ঘটে। এর আনুষ্ঠানিক শুরু ও মূল কার্যক্রম জকিগঞ্জের রতন গঞ্জ ফুলতলী সাহেব বাড়ি কেন্দ্রিক হলেও,এর ব্যাপ্তি এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তরে। আজ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের প্রায়…টি দেশে মোট…. কেন্দ্রে এই
দারুল ক্বেরাতের মাধ্যমে সহিহ তথা তারতিব-তারতিলের সাথে পবিত্র ক্বোরআন শরীফ শিক্ষা দানের ব্যবস্থা
রয়েছে। ০ এ এক আলোর দীপশিখা…….!! দারুল ক্বেরাত মজিদিয়া ব্যক্তি উদ্যোগে শুরু হলেও,এখন এর কর্ম পরিধি যে কত বিশাল হয়েছে,তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস ই করা যায়না। সাহেব ক্বেবলা জীবিত থস্কাবস্থায় তিনি এই সুবিশাল কর্ম যজ্ঞ পরিচালানার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করলেও,তাঁর পরিবারের ছোট
বড় সকল সদস্য নিজেদের সাধ্য মত পরিচালনায় অংশ নিয়েছেন।তাঁর মৃত্যুর পর বড় সাহেব ক্বেবলা অভিধায় ভক্ত কূলের কাছে চরম ও পরম নন্দিত- বন্দিত,তাঁর জৈষ্ঠ্য পুত্র হযরত মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী সাহেব পরিচলানার কেন্দ্র বিন্দুতে আসীন রয়েছেন। তাঁর সাথে আগের মত পরিবার পরিজন সহ একঝাঁক আলেম- ওলামা তথা স্বেচ্ছাসেবী ক্বারী
সাহেবান রয়েছেন।
০ স্বেচ্ছাশ্রমের এক অনন্য নজীর.!!
অনেকেই হয়তো জানেন না যে,দারুল
ক্বেরাত মজিদীয়া একটি শতভাগ
স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান।
দেশে বিদেশে যেখানেই এর শাখা
প্রশাখা রয়েছে,সব খানে ই তা সম্পূর্ণ
স্বেচ্ছাশ্রমে পরিচালিত হয়। যে
ক্বারী সাহেব গণ কেন্দ্র গুলোতে
মাসব্যাপী বিশুদ্ধ ভাবে কোরআন
শিক্ষা দেন,তাঁরা অনেকে কষ্ট করে
হলেও দিবারাত্র কেন্দ্রে অবস্থান
করেন,অনেকে লজিংয়ে
থাকেন,অনেকেই দোকান-মোকামেও
থাকেন। তাঁদের সুনির্দিষ্ট কোন
বেতন-ভাতা থাকে না। তাঁরা আল্লাহপাক ও তাঁর রাসুলে পাকের মহব্বত,পবিত্র কোরআনে পাকের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সাহেব ক্বেবলার স্মৃতির প্রতি তাঁদের আন্তরিক ভালোবাসার কারণে বছরের পর বছর ধরে এ দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন।অবশ্য নিজ নিজ কেন্দ্রের ছাত্র ছাত্রী ও এলাকাবাসী পরিচালনা কমিটির সদস্য গণ নিজ নিজ উদ্যোগে কোন সম্মানী বা উপহার উপঢৌকন দিলে তাঁরা তা সানন্দে গ্রহণ করেন। অবশ্য,বলা ই বাহুল্য,দু একটি ব্যতিক্রম ছাড়া পাক কালামের এই খেদমতগার গণ অনেকাংশেই মাশাআল্লাহ সম্মানজন সম্মানী ও উপহার পেয়ে থাকেন।
০ এক মাসের পরিকল্পনা………..!!
দারুল ক্বেরাতে যে শুধু তাজবিদ শিক্ষার মাধ্যমে বিশুদ্ধ ভাবে কোরআন পাঠ শিক্ষা দেয়া হয় তা নয়। নিম্ন পর্যায়ে হযরত মাওলানা ইমাদ উদ্দিন চোধুরী লিখিত প্রাথমিক তাজবিদ শিক্ষার পাশাপাশি হযরত মোকাররম আলী লিখিত আতফালুস সিবিয়ান নামক গ্রন্থ থেকে বাচ্চাদেরকে দোয়া-দুরুদ,নামাজ-কালাম ও অজু-গোসলের নিয়ম কানুনও পর্যায় ক্রমে রুটিন ভিত্তিতে শিক্ষা দেয়া হয়। উচ্চ পর্যায়ে ছাদিছ পর্যন্ত সাহেব ক্বেবলার আল কাওলুছ ছাদিদ নামক গ্রন্থ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি কোরআনে পাকের খুঁটি নাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এ ছাড়াও সকল কেন্দ্রে ই জোহরের নামাজের পর মাইক যোগে পবিত্র খতমে খাজেগান পাঠ করা হয়।
০ দারুল ক্বেরাত ও ফুলতলীর ফুলবাগান……….!
দারুল ক্বেরাত কে ঘিরে ফুলতলীতে যে কর্মযজ্ঞ চলে, তা রমজান মাসে সেখানে না গেলে উপলব্দি করা যাবেনা। রমজান শুরুর ১০-১৫ পূর্ব থেকে ই বৃহত্তর সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে কেন্দ্র প্রধান সহ ক্বারী সাহেবগণ ফুলতলী সাহেব বাড়িতে আসতে শুরু করেন,জমে ওঠে সাহেব বাড়ির তথ্য কেন্দ্র। দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা গণ ভীড় সামলাতে হিমসিম খান তবু তাঁদের ক্লান্তি নেই,শ্রান্তি নেই,সদা হাস্যমুখে সবাই কাজ করেন। রমজানের দু তিন দিন আগে থেকে দলে দলে আসে দারুল ক্বেরাতের শিক্ষার্থীরা ফুলতলীতে। ইতিমধ্যে নড়ে চড়ে বসেন এলাকাবাসী ও। কে কাকে কোন গ্রামে কার বাড়িতে লজিং নেবেন তা নিয়ে রীতিমত হৈ চৈ পড়ে যায়!
০ এক জনের উদ্যোগ,হাজার উপকারভোগী……..!!
দারুল ক্বেরাতের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সাহেব ক্বেবলা নিজে।তিনি আলোর যে ছোট্ট দীপশিখা জ্বালিয়েছিলেন,আজ কালের বিচারে তা মহা আলোক মালা তৈরি করেছে। সেই আলোর ফেরিওয়ালা সাহেব ক্বেবলার জীবদ্দশায় ই তা ছড়িয়ে পড়েছিল দিক থেকে দিগন্তে। তাঁর মৃত্যুর পরও আল্লাহ পাকের অপার রহমতে তা এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বলতে দ্বিধা নেই,মূলত ফুলতলী সাহেব বাড়ির ইসলামী কর্ম কান্ডকে ঘিরে তালাবে ইলম ছারাও উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ জনগণও। আজ এ সুবিশাল কর্মপ্রবাহ কে ঘিরে খোদ সাহেব বাড়ির পাশে গড়ে উঠেছে একটি মিনি বাজারও। দারুল ক্বেরাত কে ঘিরে সারা মাস এ মিনি বাজার সরগরম থাকলেও ফুলতলি কামিল মাদ্রাসার ওয়াজ মাহফিল কিংবা সাহেব ক্বেবলার ইসালে সাওয়াব উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ টাকার বিজনেসও হয় এখানে। এতে উপকৃত হন সাধারণ জনগোষ্ঠী সহ এলাকার সর্বসাধারণ।
০ এবার এল মাহে রমজান…….!!
রমজানের প্রথম দিন থেকে শেষ অবধি পুরো সাহেব বাড়ি থাকে সরগরম,থাকে লোকে লোকারণ্য। তবে সবচেয়ে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয় ইফতারের সময়। এতিম খানার এতিম গণ সহ শত শত ছাত্র যখন লাইন ধরে,দোয়া কালামের সাথে সুশৃংখল ভাবে ইফতারি নিতে আসে,তখন এক অনাবিল স্বর্গীয় সুষমায় ভরে উঠে পুরো সাহেব বাড়ি।
একই মোহময় পরিবেশ ঘটে সকল নামাজের আযানের পরও।
০ এ এক আনন্দ যজ্ঞ…………!!
আগেই বলেছি,দারুল ক্বেরাত একজন মহামানবের উদ্যোগে শুরু হলেও এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে দিক থেকে দিগন্তে। যেখানেই কেন্দ্র,সেখানেই তাই মাহে রমজান কে ঘিরে শুরু হয় এক উৎসবের আমেজ। আর মূল কেন্দ্র ফুলতলীতে তো অনেক আগে থেকেই শুরু হয় সাজ সাজ রব,এক অনাবিল আনন্দময় আবাহন। এক মাসের সে আনন্দের রেশ থাকে বাকি এগার মাস। আবার আসে রমজান মাস,আবার শুরু হয় আনন্দময় আবাহন। আবার আসে,আবার আবার আবার…..! যেহেতু মহাগ্রন্থ আল কোরআন কে ঘিরে এ দারুল ক্বেরাত মজিদিয়ার এ সু বিশাল কর্মযজ্ঞ এবং যেহেতু আল কোরআন অমর,অব্যয় ও অপরিবর্তনীয় মহাগ্রন্থ কে এর সকল কর্মকান্ড আবর্তিত যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি,একসময় সাহেব বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের কেউ জীবিত না থাকলেও,বর্তমান ক্বারি সাহেবগণের কেউ জীবিত না থাকলে,কেন্দ্র ও মূল কেন্দ্র এলাকাবাসী আমরা কেউই জীবিত না থাকলেও দারুল ক্বেরাত মজিদীয়া ফুলতলী ট্রাস্টের কোরআনুল কারিমের এ খেদমত কেয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।
০ শেষ কথা………..!!
আজকের লেখার শেষ পর্বে এসে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে আমাদের গর্বের ও গৌরবের এই প্রতিষ্ঠানের সনামধন্য প্রতিষ্ঠাতা সাহেব ক্বিবলা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ সহ যুগে যুগে কালে কালে যাঁরা শ্রম দিয়ে,অর্থ দিয়ে ও মেধা দিয়ে এটিকে এ পর্যন্ত এগিয়ে এনেছেন,তাঁদের সকলের জন্য আল্লাহ পাকের অপার রহমত কামনা করছি।
বি:দ্র:
০১.রমজান ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদে প্রতি শুক্রবার দারুল ক্বেরাতের সাপ্তাহিক কেন্দ্রও পরিচালিত হয়।
০২.আমার এই লেখায় তত্ত্বগত কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে বিনম্র অনুরোধ জানাচ্ছি।
০৩.লেখাটি একটি ম্যাগাজিনের জন্য ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময়ে লেখা। তাই,পড়তে গিয়ে ক্রম ঠিক থাকবেনা। চুড়ান্ত পর্যায়ে ক্রম ঠিক রাখা হবে,ইনশাআল্লাহ।
লেখক : অধ্যক্ষ,লুৎফুর রহমান হাইস্কুল এন্ড কলেজ এবং চেয়ার পার্সন,সীমান্তিক কেন্দ্রীয় কমিটি