স্মৃতিতে অম্লান বন্ধু শাওন চৌধুরী……..
প্রকাশিত হয়েছে : ৮:৪৮:০৬,অপরাহ্ন ২০ অক্টোবর ২০১৯ | সংবাদটি ৮৫৭ বার পঠিত
আহমেদর তানভীর,
এমন কোন প্রোগ্রাম, এমন কোন ট্যাুর নাই যেখানে শাওন অনুপস্থিত ছিল। পাপ্পু এবং শাওন এই জোড়া এক করতে না পারলে আসলে আড্ডা কিংবা ট্যাুর কোন কিছুই জমতো না। তবে শাওন একাই জমিয়ে দিতে পারতো আড্ডা।
স্কুল ও কলেজ জীবন শেষে সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও শাওন ব্যতিক্রম ছিল। সে জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টা করতো। সবচেয়ে বড় গুণ সে আশাবাদী মানুষ ছিল। কখনো আশাহত হতে তাকে দেখিনি। এমনকি আমরা যখন কোন কিছু নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতাম শাওনকে তখন ভাবলেশহীন দেখতাম। কোনকিছুকে যেন সে পাত্তাই দিতে চাইতো না। যা হয়,হবে কিংবা হয়েছিল সেসব নিয়ে সৃষ্টিকর্তার ওপরই ভরসা করতো।
জটিল জিনিস,তিতা জিনিসও এমন হাস্যরাসভাবে উপস্থাপন করতো না হেসে উপায় নেই। পশু পাখি এসব নিয়ে ওর ব্যাপক আগ্রাহ ছিল। একবার শাওনের বাড়িতে গিয়ে অনেকধরনের পাখি দেখেছিলাম। নিজের শখকে সে ব্যবসায়ও রূপ দিয়েছিল। অল্প সময়ে মাছের ফিশারী,গরুর খামার এসব গড়ে তুলেছিল। Glib সেখানেও সে আমাদের সাথে জড়িত ছিল।
মানবিক গুণে শাওন সমৃদ্ধ। হাত পেতেছে কেউ কিন্তু খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি। শেষবার ব্যবসায় লাভ হবার কারনে পারিশ্রমিকের বাহিরে কয়েকজন সনাতনধর্মাবলম্বীকে পূজার বকশিস হিসেবে কয়েক হাজার টাকা দিয়েছিল।
একটা ঘটনায় শাওনের মানবিকতার প্রত্যক্ষদর্শী হয়েছিলাম। ওর বাড়িতে ঘুরতে যাবার পর পাপ্পুর মোটরসাইকেল হঠাৎ একটা গরুর বাচ্চাকে আঘাত করে। যদিও আমাদের কোন দোষ ছিল না। গরুর বাচ্চা হঠাৎ লাফ দিয়ে সামনে চলে আসায় এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আশেপাশে কেউ না থাকায় বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে আমারা চলে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শাওন যেতে দেয়নি। মোটরসাইকেল থেকে নেমে গরুর বাচ্চাটির মুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। গরুর মালিক আসলে বাচ্চাটির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। পরবর্তীতে আমরা যোগাযোগ না করলেও জেনেছি যে গরুর মালিককে চিকিৎসার জন্য শাওন টাকা দিয়েছিল।
শাওন ওর মুখ দিয়ে কাউকে কষ্ট দিতো না। যখন আড্ডায় বসে কোথায় যাওয়ার কথা বলতাম একেকজন একেক জায়গা বলতো। ও কই যাবে ওর পছন্দের জায়গার কথা ঠিকই বলতো। তবে শেষে বলতো, ‘,অখানো গেলে ভালা অয়,এর পরেও দেখো ভাই সবে যেখান ভালা মনে করো’। ওর কথা বলার ঢং দেখে আমি মাঝেমধ্যে বিস্মিত হতাম। একটা মানুষের মধ্যে এতো রসবোধ কেমনে থাকে।
আবার আমাদের মধ্যে বন্ধুর সম্পর্ক থাকলেও সে সবাইকে ভাই বলে ডাকতো। কারো নাম ধরতে ডাকতে ওরে খুব কম সময়ই দেখেছি। মনের অজান্তে এখন আমরাও বন্ধুরা একে অন্যকে নামের শেষে ভাই বলে সম্বোধন করি।
শাওন চলে গেছে। অসময়ে চলে গেছে বলবো না। সময়েই চলে গেছে। অসংখ্য মানুষকে শুধু চোখের জলে ভাসিয়ে গেছে। রেখে গেছে অজস্র স্মৃতি। স্মৃতি হাতড়িয়ে বাকিটা সময় না হয় আমরা শাওনকে নিয়েই থাকবো।
বড্ড হিংসে হয় শাওন। এতো কম সময়ে এতো মানুষের ভালোবাসা এতো মানুষের মনে জায়গা করে নেয়া কয়জনই বা পারে।
ভালো থাকিস শাওন ভাই আমার।