স্মৃতিতে শাওন চৌধুরী…….
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫৭:৪০,অপরাহ্ন ০৩ জানুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ৩৩৮ বার পঠিত
রাজা চৌধুরী
একটি লিখা লিখবো শুরুটা কোথা থেকে করবো ভেবে পাচ্ছি না শেষ হবে অবশ্য চোখের অশ্রু দিয়ে ফেসবুকের এ যুগ মানুষকে কলম খাতা আয়োজনের দায় থেকে মুক্তি দিয়েছে, আগে মানুষের মনের যত কথা যত ব্যাথা ঠাঁই পেত মুখ বন্ধ ডায়েরির পাতায় এখন সে সব কথা উঠে আসে ফেসবুকের পাতায় একজনের আনন্দ বেদনার গল্প গাঁথা লিখা গূলো পড়ে হাজারো বন্ধু পছন্দ করেন মন্তব্য করেন আনন্দ বেদনার সহযাত্রী হোন। চলে গেল ২০১৯ সাল সবাই হিসাব মেলাচ্ছেন এ বছরের প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির একজন রাজনীতিবিদ, কুটনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ থেকে একজন প্রেমিক পর্যন্ত, মা হারা সন্তান কিংবা সন্তান হারা মা, ভাই হারা বোন কিংবা ভাইয়ের কাছে বছরটি কেমন গেল। ধরা যাক আমারই কথা আমার ভাই শাওন চৌধুরী সুন্দর সুঠাম পরিশ্রমী মানবিক প্রানচাঞলো ভরপুর যুবক ছিল, মোটরসাইকেলে দাপিয়ে বেড়াত এক জেলা থেকে আরেক জেলা এমন দুঃসাহসী ভ্রমণে আমাদের উদ্বেগ উৎকন্ঠা কাজ করতো সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে কিন্তু আল্লাহর রহমতে কখনোই সে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি, বাইরে ট্যুারে গেলে একটু পর পর ফোন দিত আম্মাকে নির্ভার এবং টেনশন মুক্ত রাখতে কে জানতো এমন সচেতন যুবক লেপ্টোপাইরসি ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন, ১১ই অক্টোবর জ্বর আর বমি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলো হাসপাতালে ভর্তির পর আমাদের আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারেন সে অসুস্থ সবার একই প্রশ্ন তার মতো সুঠাম মানুষের আবার কিসের অসুখ সবাই দেখা করতে আসতে থাকেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন পরামর্শ দেন, ১৩ ই অক্টোবর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত হয় রাত ১টায় রওয়ানা দিবো সবকিছুর আয়োজন করতে মামাতো ভাই তালিম আর খালাতো ভাই জুবের এর ছোটাছুটি হঠাৎ করে রাত ১১টার পরে তার শ্বাস কষ্ট শূরু হয় সবার মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়ে শাওনের অবস্থার অবনতি হয়েছে আত্মীয় স্বজন শাওনের বন্ধুরা পাগলের মত ছুটে আসতে থাকেন হাসপাতালে, ব্যাস্ত হয়ে যায় আমাদের ফোন, আমেরিকা থেকে চাচাতো ভাই অয়ন মূহুর্তে মূহুর্তে যোগাযোগ করে উন্নত প্রযুক্তির হেলিকপ্টারে দিয়ে ঢাকায় নিয়ে যেতে শাওনের যে চলে যাবার বড্ড তাড়া সে কি আমাদের সেই সুযোগ দিবে ১১টা -১২ঃ৪৫ কতক্ষণ ই বা সময় আই সি ইউ তে ট্রান্সপারের পর কয়েক মিনিট ও সচল ছিলোনা হৃদযন্ত্র ডাক্তারের সকল চেষ্টা ব্যার্থ করে শাওন পাড়ি জমায় ওপারে, শাওন একবার ট্যূার থেকে ফিরবার সময় তার বন্ধু শাহাবুদ্দিন কে বলেছিল দেখ কি চমৎকার অভিজ্ঞতা মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে রাত থেকে সকাল হচ্ছে, শেষ বার শাওন যখন সিলেট থেকে বাড়ি ফিরছিলো তখনও রাত থেকে ভোর হচ্ছিল শাওন এ দৃশ্য দেখছিলো না সে তখন চোখ বন্ধ করে ফ্রিজিং গাড়িতে নীরব নীথর, বাড়িতে নিয়ে আসার পর কি বাঁধ ভাঙা স্রোত মানুষের, কে আসেননি? রাজনীতিবিদ,ব্যাবসায়ী,ছাত্র, শিক্ষক, সাংবাদিক,সাধারণ মানুষ কার নাম বাদ দিবো সবাই এসেছেন আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সমবেদনা প্রকাশ করেছেন ধৈর্য্য ধারনের অনুরোধ করেছেন, কিছু মানুষ সবসময় জিতে যায় শাওন ও জিতে গেল শেষ বিদায়ে হাজারো মানুষকে কাঁদিয়ে, এইতো জীবনের স্বার্থকতা বেঁচে থাকার স্বার্থকতা শাওনের পরিবারের মানুষের এখানেই শোক কে শক্তিতে রূপান্তর করার চেষ্টা শাওনের ভাই হিসেবে এখানেই শান্তনা খুঁজি। সকল স্বজন প্রিয়জন হারানো মানুষকে আল্লাহ ধৈর্য্য ধারনের তৌফিক দান করুন। শাওনের জন্য দোয়া চাই সবার সু সাস্হ্য সুন্দর জীবন কামনা করছি। আল্লাহ হাফেজ।
লেখক, শাওন চৌধুরীর বড় ভাই।