কর্মবীর-মানবিক শিক্ষক বিজয় পুরকায়স্থকে নিয়ে কিছু কথা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৭:৩০,অপরাহ্ন ১৭ মার্চ ২০২০ | সংবাদটি ২৪১ বার পঠিত
২০১৮সালের অক্টোবর মাসের ২য় সপ্তাহের শুরু আর আমার দেখা এক কর্মবীরের উপ্যাখ্যান। তিনি নগরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
একটি প্রতিষ্ঠান কে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে আসতে যে যুগান্তকারী পদক্ষেপ
গুলো গ্রহন ও বাস্তবায়ন করেছেন এবং করছেন সে গুলোর মধ্যে মাত্র উলেখ্য যোগ্য
কয়েকটি পদক্ষেপ তুলেধরবো।
স্কুলে শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত করণ যেখানে ছিল অর্ধশত আজ সেখানে দেড়শত অর্থাৎ
১৫০জন। বৎসরের শুরুতে স্কুল ড্রেস শতভাগ অথচ কোন অভিভাবক কিনে
দেননি,বৎসরের শুরুতে প্রতিটি ছাত্রের জন্য স্কুল ব্যাগ,অবাককরা বিষয় হলো কোন
অভিভাবক তার কোন শিশুকে একটি ব্যাগও কিনে দিতে হয়নি,মিডডে মিল শতভাগ
এখানেও চমক, বৎসরের প্রথমেই টিফিন বক্স পৌছে যায় শিক্ষার্থীদের হাতে,সাতে
৫০০মিলি লিটারের পানির বোতল,প্রতি একমাস পরপর বোতল পরিবর্তীত হয়ে নতুন
বোতল শিক্ষার্থীর হাতে আসে,প্রাথমিক শিক্ষাক ইতিহাসে বাংলাদেশের আর
কোথাও এধরনের ব্যবস্থা আছে কি না,অথবা থাকলেও আমার জানার বাহিরে।
বিদ্যালয়টির মুল ক্লাস শুরুর আগেআরেকটি ক্লাস পরিচালিত হয় ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণীর
ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়ে যার দায়িত্বে আছে হা.ছ.ন নামের একটি সামাজিক সংগঠন।
বিদ্যালয়ের পিছনে পুকুর ভরাট ,বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট,অফিস ফার্নিচার
প্রস্তুত,প্রথম জানুয়ারী বই বিতরনের সাথে মিষ্টি বিতরণ,সাথে বিভিন্ন ধরনের
শিক্ষা সামগ্রী অর্থাৎ শিক্ষা উপকরণ বিতরণ,শতাগ রেজাল্ট যা উলেখ করার মত
অর্থাৎ গড় নম্বর প্রতিটি ছাত্রের ৪০এর উপরে- এ,এ-,বি। অথচ ২০১৮এর আগের
রেজাল্ট গুলো একটু পর্যলোচনা করলে মনে হবে হয়তো আমরা অন্য কোন জগতে
ছিলাম আমাদের সমাপনী সহ বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্ট ছিল না বলার মতো এককথায়
জা লজ্জাস্কর ।
প্রতিটি জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থীদের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান,
যা অনেক সময় বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুলো করতে ভায় পায় তবে এখানে আরেকটি বিষয়
লক্ষ্যনীয় প্রতিটি অনুষ্ঠান এবং বিশেষ প্রয়োজনে এস এস সি ,পি টি এ
,এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের অকৃত্রিম সহযোগিতা এ বিষয়টিও এক ধরনের
হিরসনীয় প্রসংসার একক দাবিদার প্রধান শিক্ষক।
আরেকটি নিয়মিত অনুষ্টান,নিয়মিত আয়োজন,শিক্ষা সফর,স্কুলের প্রতিটি
শিশুদের নিয়ে এক ব্যতিক্রমী আয়োজন যা প্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসে এই
উপজেলায় প্রথম বললে ভূল হবে না।
৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের খাতা, কলম, ফ্রি যা প্রধান শিক্ষক প্রদান করেন এছাড়া
সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের খাতা,কলম ফ্রি,মেধাবীদের খাতা,কলম ফ্রি,স্থানীয়
উদ্দোক্তা সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সহযোগিতায় বহুমূখী বৃত্তির ব্যবস্থা
যা এই অঞ্চল সহ গোটা জকিগঞ্জে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। আরও অবাক করার
মতো বিষয় স্কুলের যে ছাত্রটি অসুস্থ,অসহায়,অনুপস্থিত,প্রধান শিক্ষক সেখানে
গিয়ে হাজির অসুস্থ শিশু টিকে যাবতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা,অসহায়ের
অসহায়ত্বরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ যা বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার ইতিহাসে আরও
এক বিরল দৃষ্টান্ত বললে মোটেও ভুল হবে না।
এমন কি এই প্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রাকাশিত হয়েছিল,এর মধ্যে মাত্র
( ‘‘আমার দেখা নিঃস্বার্থ একজন সত্যিকারের মানব প্রেমী ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, তিনি আমার এক প্রিয় শিক্ষক
শ্রদ্ধেয় বিজয় কৃষ্ণ দত্ত পুরকায়স্থ, প্রধান শিক্ষক নগরকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়’’।
স্যার আপনার এই মানবিকতা দেখে আমি আপনাকে নিয়ে লেখার লোভ সামলাতে পারিনি তাই আপনার অনুমতি ছাড়া
আপনার অজান্তে ছবিটি তুলেছি, সেই জন্য ক্ষমা চাচ্ছি স্যার।
স্যার আপনি স্কুল যোগদান করার পর থেকে শিক্ষর্থীদেরকে আপন সন্তানের মতো গড়ে তুলছেন, নিজের পকেটের টাকা
দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন কাউকে শিক্ষা সামগ্রী কিনতে আবার যারা টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারে না
তাদের জন্য নিজের টাকা খরছ করে চিকিৎসা সেবা এনে দিচ্ছেন। আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক দেখেছি কিন্তু
আপনার মতো মানব কল্যাণে এতো নিখুত ভাবে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে কাউকে দেখিনি। আসলেই প্রসংসাটা
আপনারই প্রাপ্য স্যার।
প্রসংসা না করে পারলাম না স্যার আপনার জন্য অন্তরের অন্তস্থল থেকে দোয়া করি স্যার, আপনি যেন অনন্তকাল বেঁচে
থাকেন আমাদের মাঝে আমাদের গর্ব আর আদর্শ হয়ে। আপনার জন্য শ্রদ্ধা,ভালবাসা ও শুভ কামনা রইলো স্যার।
পরিশেষে আমি এবং আমরা যারা মত থেকে অত্র প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে যারা
সংশ্লিষ্ট,বিশেষ করে যাকে কেন্ত্র করে এই প্রতিষ্ঠান ,সেই প্রতিষ্ঠান প্রধানের মঙ্গল কামনা
করি। সেই সাথে সাথে এই প্রতিষ্ঠান কে ও প্রতিষ্ঠান প্রদান কে এ্ধসঢ়;কটি মডেল প্রতিষ্ঠানও
মডেল শিক্ষক হিসেবে সামনে রেখে অন্য প্রতিষ্ঠান গুলো যেন অনুকরনীয় হয়। এই বিষয়ে
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ উর্দ্ধতন মহলের দৃষ্টি আর্কষণ করছি। সেই সাথে
সাথে শ্রেষ্ঠত্ব খেতাবে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান এই খেতাবে ভূষিত
হবেন তা বিবেচনায় এনে এখনই উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের শিক্ষা অফিসের সিদ্ধান্ত
নেওয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়। আর সেই সাথে সাথে আবারও প্রাথমিক শিক্ষার সর্বোচ্চ
পর্যায় পর্যন্ত আমার এই প্রতিবেদন টি গুরুত্বের সাথে দেখা উচিৎ,উৎসাহিত করা
উচিৎ,বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত করা উচিৎ, এমন কি আমাদের দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়
পর্যন্ত এই প্রতিবেদনটির গুরুত্ব দিলে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয় বড়বেবই কমবে না। বিদায়
নেওয়ার আগে আবারও সেই মহান শিক্ষাগুরু,দীক্ষাগুরু,মহান কর্মবীর আপনাকে হ্নদয় থেকে সালাম,মন
থেকে অভিভাধন পরমকরুনাময় আপনাকে ভালো রাখুন,হে কর্মবীর (বিজয় কৃষ্ণ দত্ত পুরকায়স্থ)
সাথে সাথে আপনার স্কুলের সকল শিক্ষক/শিক্ষিকা সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।
লেখক, ছাত্র-মদনমোহন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।