বন্ধ করে দেওয়া হবে এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া গোটা রাজ্যে: আসামের সরকারি মাদ্রাসায় আর ধর্মীয় শিক্ষা নয়
বন্ধ করে দেওয়া হবে এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া গোটা রাজ্যে
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪৮:১৭,অপরাহ্ন ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | সংবাদটি ১২৬০ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি : গুয়াহাটি (আসাম) : অাসামে আর সরকারি খরচে ধর্মীয় শিক্ষা চলবে না। আর একইভাবে শিক্ষার নামে চলা ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ সরকারি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অাসামের রাজধানী দিসপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এভাবে ঘোষণা দেন হিন্দু ডানপন্থী দল বিজেপি শাসিত রাজ্যটির প্রতাপশালী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা । মন্ত্রী হিমন্ত শর্মা আগামী চার থেকে পাঁচ মাসের মধ্যেই অাসামের সরকারি মাদ্রাসা ও সংস্কৃত টোলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করে। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যে এনিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্য অনুযায়ী, আরবি ভাষা শেখানো, ধর্মগ্রন্থ শেখানো সরকারের কাজ নয়।। রাষ্ট্রের টাকায় স্কুলে ধর্মগ্রন্হ শেখানো হলে তো গীতা, বাইবেলও শেখাতে হবে। সেইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রীর বক্তব্য, অাসামের সরকারি মাদ্রাসা, হাইমাদ্রাসা ও সংস্কৃত টোলগুলিকে আগামী চার – পাঁচ মাসের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে হাইস্কুল এবং হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে পরিণত করা হবে। শিক্ষকদের সমস্যা হবে না তাঁরা এসব স্কুলে পড়াবেন। কিন্তু্ু য়ারা ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ দিচ্ছেন তাঁদের আর কাজ থাকবে না। তবে ঘরে বসে অবসর পর্যন্ত তাঁরা নিয়মিতভাবে মাস মাইনে পেয়ে য়াবেন। অাসামের প্রতাপশালী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিত্ত মন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা র মতে, কেউ নিজের টাকা খরছ করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে শিক্ষা দিতে পারেন, তবে রাষ্ট্র ও সরকারি খরচে চলতে থাকা ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্হা বন্ধ করা হবে। এর আগে মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা অসমের সরকারি মাদ্রাসা গুলিতে দীর্ঘ দিন থেকে চলে আসা শুক্রবারের ছুটি তুলে দেন। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার এবং বিজেপির অভিভাবক সংগঠন আর এস এসের প্রিয়পাত্র হওয়ার জন্য সময়ে সময়ে চরম মুসলিম বিরোধী অবস্থান ও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন হিমন্ত।
এর আগে অাসামের সরকারি মাদ্রাসাগুলির পরিচালনায় থাকা ডাইরেক্টরেটকেও ভেঙ্গে দেন।। একইভাবে বহু পুরানো মাদ্রাসা শিক্ষার বোর্ডটি ভেঙ্গে দেওয়ার প্রয়াস নেন মন্ত্রী হিমন্ত। তবে সেসময় রাজ্যজুড়ে তীব্র প্রতিবাদ শুরু হওয়াতে শুধু রবিবারে ছুটি শুক্রবারের পরিবর্তে করে বাকিগুলি ছেড়ে দেন। এবার কিন্তু অাসামের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরাসরি অসমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় চলতে থাকা সরকারি টাইটেল, সিনিয়র, ও প্রিসিনিয়র ও হাইমাদ্রাসা ও সংস্কৃত টোলগুলির উপর কোপ বসাতে যাচ্ছে রাজ্যের বিজেপির নেতৃত্বে থাকা সরকারটি। অবশ্য টোলের সংখ্যা সীমিত এবং মুলত মাদ্রাসাকে টার্গেট করে এই সিদ্ধান্ত।
শিক্ষা মন্ত্রীর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে গোটা অাসামের সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ মুহূর্তে অাসামে সরকারি মাদ্রাসার সংখ্যা হল ৪৩৪ এিস্তরীয় মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য রয়েছে প্রি- সিনিয়র ( এল,পি), সিনিয়র ( এমই ও হাইস্কুল স্তর),এবং টাইটেল মাদ্রাসা ( কলেজস্তর পর্যন্ত)।অন্যদিকে সংস্কৃত টোল রয়েছে মাএ ৯৭ টা।
তবে রাজ্যের মাদ্রাসার তুলনায় সংস্কৃত টোলগুলির অবস্থাও খুবই খারাপ রয়েছে। মাদ্রাসা গুলিতে ছাত্র থাকলেও কিন্তু রাজ্য সরকারের অবহেলার জন্য শিক্ষকের হার প্রায় কম। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যেভাবে বক্তব্য রাখছেন এতে গোটা রাজ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে পরিচিত ব্যক্তিরা তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রীর নিশ্চয় কোথাও ভূল হচ্ছে। মাদ্রাসা মানেই ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। মধ্য শিক্ষা পর্ষদের পাঠ্যক্রম অনুসারে মাদ্রাসায় অঙ্ক – ইংরেজি – বিজ্ঞান সহ সব ক’টি বিষয়ে পাঠ দেওয়া হয়। শুধু এগুলির সঙ্গে কোরান ও হাদিস এবং উর্দু ভাষার এর শিক্ষা প্রদান করা হয়। সেবার (সেকেন্ডারি এডুকেশন বোর্ড) মাধ্যমে চলা স্কুলগুলি থেকে বেশি বিষয় পড়ানো হয় মাদ্রাসায়। অাসামের মুসলিম বিদ্বজ্জনরা অভিযোগ তুলেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে কথা বলছেন তার মধ্যে শিক্ষা ব্যবস্হার সংস্কার ঘটানোর কোনও চিন্তা চর্চা নেই। তার মুখে যা আসে সেটা তিনি বলে দিচ্ছেন নিজের রাজনৈতিক ইচ্ছে পূরণ করতে। অাসামের প্রতাপশালী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিত্ত মন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যেভাবে অাসামের সরকারি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করে দেওয়া কথা বলেছেন এনিয়ে সারা অাসাম মাদ্রাসা ছাত্র সংস্থা ( আমসা) সহ বিভিন্ন সংগঠন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।ছাত্র সংস্হাটি হুমকিও দিয়েছে শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অাসামের সরকারি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পথে গেলে গোটা রাজ্যজুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা। এদিকে, সারা অাসাম মাদ্রাসা শিক্ষক ও কর্মচারী সংস্হার প্রাক্তন সভাপতি তথা বদরপুর টাইটেল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার অাসামের সরকারি মাদ্রাসা গুলি বন্ধ করে দেওয়া ঘোষণা পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক একটা ইস্যু। তিনি আরও জানিয়েছেন, সরকারি মাদ্রাসাগুলির শিক্ষা ব্যবস্হা অনেক এগিয়ে। সংস্কৃত টোলগুলি থেকে। আর, টোলের সংখ্যা নগণ্য । কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য হল রাজ্যের সরকারি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করে দেওয়া। তাই তিনি এভাবে কথা বলছেন। শুধুই ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্য হাতেগোনা কয়টা টোলকেও বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলছেন।
ওদিকে, বিশিষ্ট আইনজীবী লেখক ইমাদ উদ্দিন বুলবুলের কথায় হিমন্ত বিশ্বশর্মা যে ঘোষণা করেছেন সেটা খুবই মারাত্মক ব্যাপার ও ক্ষতিকারক। শিক্ষামন্ত্রী হিমন্তের এ ঘোষণার পিছনে একটা রাজনৈতিক দর্শন।তিনি আরও বলেন অসমের শতাব্দী পুরাতন মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যাবস্হা পুরোদস্তুর সাংবিধানিক। আর হিমন্ত যেভাবে বলছেন সেটা হলে মানুষের সাংবিধানিক অধিকারের উপর আঘাত আনা হবে বলে জানান বুলবুল। একইভাবে গৌহাটি হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা যে কথা বলছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন ভরসা রাখতে হবে দেশের আইন ও সংবিধানের উপর। এদেশের সংবিধানে ধর্মীয় শিক্ষার অধিকার দেওয়া আছে তাই তিনি সরকারি মাদ্রাসাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দেশে আইন আছে। এভাবে কেউ সংবিধানের উপর কোপ বসাতে পারবে না। তাই আইনের আশ্রয় নিলে সব উড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরী। তবে শিলচরের লোকসভা আসনের সাংসদ বিজেপির ডঃ রাজদীপ রায় তার প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানিয়েছেন, মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সঙ্গে তিনি একমত।সরকারি টাকায় ধর্মশিক্ষা চলতে পারেনা।
তবে বেশিরভাগ সংগঠনই মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অসমের সরকারি মাদ্রাসা গুলি বন্ধ করার ঘোষণা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।