শিলচরে শুরু হল শিলচর -সিলেট উৎসব
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৪১:০৬,অপরাহ্ন ০৩ ডিসেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ৪১৯ বার পঠিত
তাজ উদ্দিন, শিলচর (আসাম), ৩ ডিসেম্বর : উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গেই শুভারম্ভ হল শিলচর-সিলেট উৎসব-২০২২। শুক্রবার সন্ধ্যায় দুদিন ব্যাপী এই উৎসবের সূচনা উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্য অতিথি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পর্যটন, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষণ রেড্ডি জানান, দুই দেশের মধ্যে ভাষাগত সংস্কৃতিগত প্রচুর মিল রয়েছে। এই মিলকে কাজে লাগিয়ে সমান্তরালভাবে দুই দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব এবং এই উদ্দেশ্যে কাজ চলছে। তিনি জানান, ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ১৩ বার বৈঠক হয়েছে। তিনি আরও জানান, ২০২১-২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক সহযোগী হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। আসামের করিমগঞ্জের সুতারকান্দি বর্ডারের ট্রেড সেন্টার ব্যবসায়িক সেন্টারে পরিণত হয়েছে। এতে দুই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বিকাশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খুবই সচেষ্ট। তিনি উল্লেখ করে জানান, আগে যেখানে ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাত বাধতো। এখন সেটা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। বিশেষ করে যোগাযোগ ক্ষেত্রেও আগে যেখানে এক মাস পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ থাকতো, এখন পরিস্থিতি বদলেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানান, সিলেট এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সাথে বাংলাদেশের মানুষের নাড়ির টান রয়েছে। তিনি আরও জানান, দুই দেশেরই মানুষের বংশগতরা নিজ নিজ দেশের রাজনৈতিক আঙিনায় নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভারত বাংলাদেশ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে ঐক্যবোধ হয়ে কাজ করছে। তুমি জানান ভারতবর্ষের সঙ্গে বাংলাদেশের খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক বাণিজ্যিক সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন থাকার জন্যই সমান্তরাল ভাবে দুই দেশের উন্নয়ন সম্ভব। এই সম্মেলনের এই উৎসবের মাধ্যমে দুই দেশের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান আরও মজবুত হবে। সিলেট ও ভারতের মধ্যে মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মায়ানমার সরকার বাংলাদেশকে যে সহযোগিতা করছে না এ প্রসঙ্গটি তুলে ধরে জানান গত ৬ বছর থেকে আশ্রয় নেওয়া এক জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চাইছে না মায়ানমার সরকার।
উৎসবের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিলচরের সাংসদ ড. রাজদীপ রায় জানান, এই উৎসবটি দুটি দেশের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বছর ভারতবর্ষ স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষ পালন করছে, বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার ও তাদের ৫০ তম স্বাধীনতা দিবস পালন করছে। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এই বছরটি দুটি দেশের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিলচর এবং সিলেটের মধ্যে বসবাসকারী মানুষেরা একে অপরের পরিপূরক হিসেবে বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি জানান, দুই দশের মধ্যে রাজনৈতিক সমাজিক ও অর্থনৈতিক দিক আরও মজবুত হবে এই উৎসবের মাধ্যমে। তিনি আরও জানান, আগামী বছর সিলেটে এই উৎসব করার ব্যাপারেও তার পরিকল্পনা রয়েছে। যদি বাংলাদেশ সরকার এতে সায় দেয়, তাহলে আগামীতে তা সিলেট শহরেই করা হবে।
মিজোরাম রাজ্যের গভর্নর কে হরিবাবু জানান, শিলচর এবং সিলেট এলাকার মানুষের মধ্যে ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত মিল রয়েছে। এবং এই উৎসবের মাধ্যমে তা আরও পরিপূর্ণতা পাবে। দুই দেশের ব্যবসায়িক আদান-প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান প্রদান হবে বাড়বে দুই দেশের মধ্যে আন্তরিকতা।
আসাম রাজ্যের, মৎস্য ও আবগারি বিভাগ মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য, দুই দেশের ভাষা, সংস্কৃতি আচার-আচরণ এক। কেবলমাত্র ভৌগোলিক সীমানার বেড়াজাল দুই দেশের মানুষের আন্তরিকতাকে আলাদা করতে পারবে না। এ ধরনের সম্মেলনের মাধ্যমে দুই দেশের মানুষরা নিজেদের মধ্যে মতবিনিময় করতে পারবে। পরিবহন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে জানান আগে করিমগঞ্জ সিলেটের মধ্যে দিয়ে ব্যবসা আদান-প্রদান হতো জাহাজের মাধ্যমে। বর্তমান সরকার এই জল পরিবহন ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গুয়াহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনার রুহল আমিন, উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোম, লক্ষীপুরের বিধায়ক কৌশিক রাই, শিলচরের বিধায়ক দীপায়ন চক্রবর্তী সহ দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরা।
ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর রিজিওনাল স্টাডিজ আয়োজিত দুই দিনের উৎসবে অংশগ্রহণ করতে সিলেট থেকে বিশিষ্টজনরা উৎসবে পৌঁছেছেন।