আসামের হাইলাকান্দিতে সান্ধ্য আইন অব্যাহত; তিনদিন ধরে বন্ধ ইন্টারনেট
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৪৪:১৫,অপরাহ্ন ১৩ মে ২০১৯ | সংবাদটি ৬৫৮ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি : গুয়াহাটি, ১২ মে : আসামের হাইলাকান্দি শহরে এখনও থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। গত ১০ মে শুক্রবার ঐ শহরের পুরনো বাজার মাড়োয়ারিপট্টি মসজিদে মুসল্লিরা জুম্মার নামাজ আদায় করার সময় দুষ্কৃতীরা মুসল্লিদের লক্ষ্য করে ঢিল ছুড়তে থাকে। এর ফলে মারপিট শুরু হলে পরিস্থিতি রণক্ষেত্রের আকার নেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ছুটে এলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সূচনাকারী দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। একাংশ ক্ষুব্ধ জনতা দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট অব্যাহত রাখে। আর, এতে পুলিশও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ও শূন্যে গুলি ছুড়লেও পরে কিন্তু কোনও কিছু যাচাই না সাধারণ নিরীহ লোকদের টার্গেট করে গুলি চালাতে থাকে। তাদের উদ্দেশ্য যে ভাল ছিল না সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় কারণ গুলিবিদ্ধ সবাই ছিলেন মুসলমান। গুলিবিদ্ধ হয়ে নারাইনপুরের বাসিন্দা ২৮ বছরের জমির উদ্দিন তরফদার নিহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে তাঁর মৃত্যু ঘটে। ঘটনার দিনই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে হাইলাকান্দি জেলা জুড়ে কার্ফু জারি করেন ডিস্ট্রিক্ট মেজিস্ট্রেট কীর্তি জলি।
শুক্রবার রাতের দিকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বরাক উপত্যকার তিন জেলা যথাক্রমে কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মূলত ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতি মুহূর্তে যেভাবে উস্কানিমুলক পোস্ট দেওয়া হচ্ছিল ও সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের প্ররোচনা মূলক কথাবার্তা লেখা হচ্ছিল, তাতে গোটা বরাক উপত্যকার পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এর পরও এতটা অবিশ্বাসের বিষাক্ত আবহাওয়া বিরাজ করছে। কার্ফু থাকা অবস্থায় শনিবার দুপুরে জমির উদ্দিন তরফদারের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জমিরউদ্দিনের পারিবারের কাঠের কারখানা রয়েছে। শহরে গণ্ডগোল লাগলে প্রাণে বাঁচার উদ্দেশ্যে তিনি বাড়িমুখো হয়েছিলেন। হাসপাতাল পয়েন্টের কাছে এসে দেখেন মারমুখী জনতার ওপর চড়াও হয়েছে পুলিশ। তখনই গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
পুলিশের গুলিতে মারাত্মক জখম হয়ে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন স্কুল শিক্ষক শাকিল মজুমদার, ইমাম দিলোয়ার হুসেন লস্কর, কম্পিউটার দোকান কর্মী জাভেদ হুসেন বড়ভুঁইয়া, প্রিন্টিং প্রেসের কর্মী জাবেদুল হক মিরা, দোকান কর্মী নুর আহমেদ, গাড়ি চালক নুরুল হক, পথচারী আইনুল হক চৌধুরী, মেহবুব আহমদ বড়ভুঁইয়া। পুলিশের গুলি চালানোর ধরন দেখে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা ক্ষুব্ধ। শহরে শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে শনিবার হাইলাকান্দি জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠকেও দেখা গেল ঘটনাবলী জন্য হিন্দু-মুসলমানরা একে অন্য সম্প্রদায়কে দোষারোপ করছেন। তবে এর পাশাপাশি সবাই শহরে শান্তি ফিরিয়ে আনার পক্ষে জোর দিলেন। অবস্থা সামল দিতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রশাসনকেই দায়ী করলেন সবাই। বাইকের সিট কে বা কারা কেটেছিল, সেই দুষ্কৃতীদের ধরতে না পারার পরিণামে জল এতদুর গড়াল।
)উল্লেখ্য, রমজানের দ্বিতীয় তারাবির নামাজের সময় পুরনো বাজার মসজিদের সামনে মুসল্লিদের রাখা বেশ কয়েকটি বাইকের সিট কেটে দেয় দুষ্কৃতীরা। তাদের পরিচয় বের করা সম্ভব হয়নি। সেই দুষ্কৃতীদের টিকির নাগাল পর্যন্ত পায়নি হাইলাকান্দির অকর্মণ্য পুলিশ। ইতিমধ্যে জমিরের শরীরে গুলি চালানোর মূল অভিযুক্ত টাউন দারোগা টিংকু গোস্বামীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জমিরের পরিবারকে পাঁচ লক্ষ টাকার এককালীন সরকারী সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা করেছেন আসামের মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। শনিবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মওলানা সারিমুল হক লস্কর, বিধায়ক দিলীপ পাল, আমিনুল হক লস্কর, সুজাম উদ্দিন লস্কর, নিজাম উদ্দিন লস্কর, আনোয়ার হুসেন লস্কর, সৈকত দত্তচৌধুরী, সাামস উদ্দিন বড়লস্কর, মানব চক্রবর্তী, সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস, পুলিশ কর্তা মুকেশ আগরওয়াল প্রমুখ। গোটা পরিস্থিতির খবর রাখছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।