কার্ফুর ভয় উপেক্ষা করে হিন্দু বন্ধুর স্ত্রীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিলেন মুসলিম ড্রাইভার
প্রকাশিত হয়েছে : ২:২৭:৫০,অপরাহ্ন ১৭ মে ২০১৯ | সংবাদটি ১০২৭ বার পঠিত

ছবিঃ হাইলাকান্দির জেলাশাসক কীর্তি জলির কোলে নবজাতক শান্তি।
তাজ উদ্দিন, শিলচর (আসাম), ১৭ মে : গত শুক্রবারের সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ও পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনার পর ক্রমশ শান্তি ফিরছে আসামের হাইলাকান্দি শহরে। ইতিমধ্যে ইন্টারনেট থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে। ফলে শিলচর, করিমগঞ্জ সহ গোটা বরাক উপত্যকার নেট ইউজাররা চার দিনের ‘বন্দি দশা’ থেকে মুক্তি পেলেন। হাইলাকান্দিতে দিনের বেলা কার্ফু থাকছে না। তবে সতর্কতামুলক ব্যবস্থা হিসেবে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত প্রতিদিন রাত বারোটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত কার্ফু থাকছে। প্রসঙ্গতঃ ২৩ তারিখ ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। হাইলাকান্দি জেলা করিমগঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত।
এদিকে, জুম্মার নামাজে মুসল্লিদের উপর ঢিল মারা নিয়ে যে মারপিটের সূত্রপাত, যেখানে পুলিশের বর্বর ভূমিকায় জমিরউদ্দিন তরফদার নামে এক কাঠের আসবাবপত্র তৈরির দোকান মালিকের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে, সেই হাইলাকান্দিতেই কার্ফুর সময় অনেক ইতিবাচক ঘটনার খবরও ধীরে ধীরে আসছে। যেমনটা হয়েছে রুবন দাস ও মকবুল হুসেন লস্করের মধ্যে। দুজনেই রাজ্যেশ্বরপুর পার্ট ওয়ান এলাকার বাসিন্দা। হাইলাকান্দি জেলা সদর থেকে খুব একটা দূরে নয় এই গ্রাম। তবে কার্ফু থাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর বুট আর গাড়ির শব্দ ছাড়া সবকিছু শুনশান। কার্ফুর তৃতীয় দিন অর্থাৎ ১২ মে প্রসব বেদনা ওঠে রুবন দাসের স্ত্রী নন্দিতার। কিন্তু স্ত্রীকে কীভাবে হাসপাতাল পর্যন্ত নিয়ে যাবেন, সেটা ভাবতে ভাবতে চোখে সর্ষেফুল দেখছিলেন রুবন। কোনওভাবে অ্যাম্বুলেন্সের যোগাড় করতে পারছিলেন না। শেষমেষ যোগাযোগ করেন বন্ধু মকবুলের সঙ্গে। বন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে নিজের অটোরিক্সা নিয়ে ছুটে আসেন মকবুল। নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়েই শহরের এস কে রায় সিভিল হসপিটালে পৌঁছে দেন নন্দিতা দেবীকে। সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন নন্দিতা।

ছবিঃ হাইলাকান্দিতে শান্তি মিছিল।
কার্ফু শিথিল হলে খবরটি ছড়াতে সময় লাগেনি। হাসপাতাল সুপার ভাস্কর দাস পুরো ঘটনাকে হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির একটা নজির বলে উল্লেখ করেন। রুবন তো তাঁর ছেলের নাম রেখেছেন শান্তি।
হাইলাকান্দির জেলাশাসক কীর্তি জলি এবং পুলিশ সুপার মহনিশ মিশ্র রুবন-নন্দিতার বাড়িতে গিয়ে তাদের অভিনন্দন জানান। মকবুলের কাজেরও খুব প্রশংসা করেন তাঁরা।
এদিকে, শান্তি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার শহরে এক শান্তি মিছিলও আয়োজন করা হয়। এতে সব সম্প্রদায়ের মানুষ অংশগ্রহণ করেন।